ঢাবি পরিবেশ পরিষদের সভা, এ মাসেই হল খোলার দাবি
সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ১৩টি ছাত্র-সংগঠনের নেতারা।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে পরিবেশ পরিষদের সভায় তারা এ দাবি জানান। বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
সভার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা অক্টোবরে হল খোলার, আমরা তার বিরোধিতা করেছি। আমরা দাবি জানিয়েছি, হল খোলার সময়সীমা যেন এগিয়ে নিয়ে আসা হয়। শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া, বাসা ভাড়া ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সব বিষয়ে বিবেচনা করে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি। একই সঙ্গে চিকিৎসা কেন্দ্র ও শারীরিক কেন্দ্রে আইসলেশন সেন্টার নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছি।
ঢাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খোলার জন্য আমরা প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছি। অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোও এ বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এছাড়া আমরা ঢাবি প্রশাসনের কাছে নিরাপদ ক্যাম্পাসের আহ্বান জানিয়েছি।
বিজ্ঞাপন
ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ছাত্র ইউনিয়নসহ সব ছাত্র সংগঠনই সেপ্টেম্বরের মধ্যে হল খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বেতন ফি, উন্নয়ন ফিগুলো মওকুফের দাবি জানানো হয়। আইসলেশন সেন্টার তৈরি ও করোনা টেস্ট যেন শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি করা হয় সে দাবিও আমরা জানিয়েছি।
ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তো দেখেছি, যে চেয়েছে তাকেই কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। তাদেরও বুঝতে হবে এখানে সময়জনিত বিষয় আছে। সভায় ৭০ জন্য উপস্থিত ছিল, সবাই যদি এক মিনিট করেও কথা বলি ৭০ মিনিট সময় লাগে। সেখানে একজন যদি ১০ মিনিট বলতে চায়, সেটা তো অযৌক্তিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলো সেপ্টেম্বরের মধ্যে হল খোলা যায় কি-না বিবেচনার অনুরোধ করেছেন। আমরাও এ বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছি। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের পর শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের পরিসংখ্যান দেখে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যত দ্রুত টিকা কার্যক্রমে যুক্ত হবে, তত তাড়াতাড়ি আমরা হল খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারব। শিক্ষার্থীদের টিকাদান ও হল খোলার বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে।
গণরুম না রাখার বিষয়ে একমত ছাত্র সংগঠনগুলো
আবাসিক হলগুলোতে গণরুম না রাখার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো।
এ বিষয়ে প্রক্টর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলের গণরুম ও সিট প্লানের ক্ষেত্র যে প্রক্রিয়া আমরা হাতে নিয়েছি তাকে সাধুবাদ জানিয়েছে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। পাশাপাশি প্রশাসনকে সহযোগিতার কথা জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। তারা আমাদের আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছে। আমরা সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানোর কথা তাদের বলেছি।
একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গণরুম না রাখার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। গণরুম প্রথা থেকে সরে আসার পাশাপাশি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তাদের সিট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া সেপ্টেম্বরেই হল খুলে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা, যেসব শিক্ষার্থী এনআইডি জটিলতার কারণে টিকার আওতায় আসেনি তাদের জন্য ভিন্ন প্রক্রিয়ায় টিকাদানের ব্যবস্থা করা, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, পর্যাপ্ত পরিমাণ আইসোলেশন সেন্টারের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন ছাত্র নেতারা।
সভায় ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ-মার্কসবাদী), ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রলীগ (বিএসএল), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ ১৩টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানীর সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সহকারী প্রক্টররা ও বিভিন্ন হলের প্রভোস্টরা যুক্ত ছিলেন।
এইচআর/ওএফ