করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বন্ধ ঘোষণার দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষার্থীদের জন্য খুলল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গ্রন্থাগারগুলো। এক ডোজ টিকা নেওয়ার প্রমাণপত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র দেখানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রন্থাগার খোলার সিদ্ধান্ত হলেও প্রথম দিনে ভিন্ন চিত্র দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ও বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে।

রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রন্থাগারে প্রবেশ করেতে দেখা যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মাস্ক দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদেরও শৃঙ্খলার সঙ্গে গ্রন্থাগারে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ড. মো. নাসিরউদ্দিন মুন্সী, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ।

অন্যদিকে বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে কোনো ধরনের নিয়মনীতি ও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এবং বহিরাগতরাও গ্রন্থাগারে প্রবেশ করেন বলে জানান তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সকাল ১০টায় কোনো ধরনের নিয়ম না মেনে একযোগে সবাই গ্রন্থাগারে প্রবেশ করে। সংশ্লিষ্টরা বাধা দিতে চাইলেও তারা মানেননি।

শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে কর্তৃপক্ষ

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক, প্রক্টরসহ অন্যান্যরা। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি এবং ব্যাপক হট্টগোল বেঁধে যায় সেখানে। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ও আশ্বাস দিয়ে গ্রন্থাগার ত্যাগ করেন তারা। এ সময় উপস্থিত  সাংবাদিকরাও কিছুটা হেনস্তার শিকার হন।

শিক্ষার্থীদের দাবি

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রন্থাগার খুললেও শিক্ষার্থীদের দাবি সব বর্ষের জন্য খুলে দিতে হবে। একই সঙ্গে সাবেকদেরও পড়ার সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া গ্রন্থাগার সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা কিংবা ৮টা পর্যন্ত খোলার দাবি জানান তারা।

শিক্ষার্থীদের আচরণে হতাশা, পড়ার আগ্রহ ইতিবাচক

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলার প্রশংসা করলেও প্রথম দিনেই বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের বিরূপ আচরণে হতাশা প্ৰকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে শিক্ষার্থীদের পড়ার আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে কর্তৃপক্ষ।

বেলা ১১টায় বিজ্ঞান গ্রন্থাগার থেকে বের হয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে যাওয়ার আজ প্রথম ধাপ সম্পন্ন করেছি। প্রথমেই আমরা কিছু শর্তে শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য গ্রন্থাগার খুলে দিয়েছি। আমরা ইচ্ছে করে শর্ত জুড়ে দিয়েছি এমনটি নয়, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায়  আমাদের এ সিদ্ধান্ত। সবকিছুই ঠিকই ছিল, কিছু সাবেক শিক্ষার্থীও ঢুকে পড়েছে। তারা তা স্বীকার করেছে এবং পড়ার আগ্রহ প্ৰকাশ করেছে। আমরা সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।

শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়ে যেকোনো সংকট বসে সমাধান করার আশ্বাস দেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের-তোমাদের সবার। তোমরা যদি সহযোগিতা না করো তাহলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সবাই ফলো করে, তোমরা যারা অনার্স চতুর্থ বর্ষ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আছ তারা অবস্থান করো এবং বাকিরা সহযোগিতা করো।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ড. মো. নাসিরউদ্দিন মুন্সী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপাতত আমরা এ সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারব না। এটা আমাদের প্রাথমিক প্রক্রিয়া। শুরুতেই শিক্ষার্থীদের এমন আচরণ হতাশাজনক। আমরা কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করে পর্যায়ক্রমে সবাইকে সুযোগ করে দেব।

শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম

স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম দেখা গেছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রায় ফাঁকা। তুলনামূলক বেশি উপস্থিতি ছিল বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে। যদিও সেখানে সাবেক এবং বহিরাগতদের উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।

উপাচার্যের পরিদর্শন

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার পরিদর্শনে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

উপাচার্য বলেন, আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছি সেটা শিক্ষার্থীরা অনুসরণ এবং দায়িত্বশীল আচরণ করেছে। তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, তাদের দিয়েই জাতি গঠন হবে। স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যাওয়ার আমাদের যে প্রক্রিয়া সে প্রক্রিয়ায় সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা কবে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকবে ক্যাম্পাস। এটাই তো আমাদের প্রত্যাশা। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়েই আগামী নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠান করতে। আমরা একটি নিয়মের মাধ্যমে যাচ্ছি। আশা করছি, ধাপে ধাপে আমরা সব শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনতে পারব।

এইচআর/এসএসএইচ