করোনার কারণে কয়েক দফা পিছিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। সব কিছু ঠিক থাকলে শুক্রবার (১ অক্টোবর) বিজ্ঞান অনুষদের (ক ইউনিট) পরীক্ষা দিয়ে শুরু হবে এবারের ভর্তি পরীক্ষা।

এছাড়া শনিবার (২ অক্টোবর) কলা অনুষদ (খ ইউনিট), ২২ অক্টোবর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ (গ ইউনিট), ২৩ অক্টোবর সামাজিক বিজ্ঞান (ঘ ইউনিট) এবং ৯ অক্টোবর চারুকলা অনুষদের (চ ইউনিট) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷

শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব ও মহামারির কথা বিবেচনা করে প্রথমবারের মতো বিভাগীয় শহরে অবস্থিত দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার ঢাবিতে মোট ৭ হাজার ১৪৮টি আসন রয়েছে। এর বিপরীতে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থী। প্রতি আসনের বিরুদ্ধে লড়বেন ৪৫ জন শিক্ষার্থী।

ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টন

‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের এমসিকিউ ও ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। শুধুমাত্র ‘চ’ ইউনিট অর্থাৎ চারুকলায় ভর্তি হতে ৪০ নম্বরের সাধারণ জ্ঞান ও ৬০ নম্বরের অঙ্কন পরীক্ষা নেওয়া হবে। ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও ‘ঘ’ ইউনিটের এমসিকিউ পরীক্ষার সময় ৪৫ মিনিট ও লিখিত পরীক্ষার সময়ও ৪৫ মিনিট। ‘চ’ ইউনিটের এমসিকিউ পরীক্ষা ৩০ মিনিট ও অঙ্কন পরীক্ষার সময় ৬০ মিনিট থাকবে।

এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের ফলাফলের (জিপিএ) ওপর ২০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার সাধারণ সময় সকাল ১০টা হলেও এবার সকাল ১১টায় পরীক্ষা শুরু হবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় দেড় ঘণ্টা।

ভর্তি পরীক্ষা হবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে

ঢাকা বিভাগের পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি), চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি), রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি), খুলনা বিভাগের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি), সিলেট বিভাগের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ে (শাবিপ্রবি), রংপুর বিভাগের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি), বরিশাল বিভাগের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ও ময়মনসিংহ বিভাগের পরীক্ষা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অনুষ্ঠিত হবে।

এর মধ্যে, ঢাবিতে পরীক্ষা দেবেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬০৬, চবিতে ২৮ হাজার ৪৬৯, রাবিতে ৩৬ হাজার ১০১, খুবিতে ২৫ হাজার ১২৬, শাবিপ্রবিতে ৭ হাজার ৯১, বেরোবিতে ৩১ হাজার ৩১২, ববিতে ৯ হাজার ৬৭ এবং বাকৃবিতে ২২ হাজার ৫৬৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন।

বৃদ্ধি পেয়েছে বিভাগ ও আসন সংখ্যা

ঢাবির ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৩০টি আসন বাড়ানো হয়েছে। এবার পাঁচ ইউনিটে আসন সংখ্যা ৭ হাজার ১৪৮ যা ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ ছিল ৭ হাজার ১১৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিট ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভূক্ত ‘ঘ’ ইউনিটে আসনগুলো বাড়ানো হয়েছে। প্রথমবারের মতো আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এ কারণে এখানে ২০টি আসন বেড়েছে। অপরদিকে, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত আধুনিক ভাষা ইনস্টিউটের ফ্রেঞ্চ ও জাপানিজ ভাষায় পাঁচটি করে সর্বমোট ১০টি আসন বাড়ানো হয়েছে।

কোন ইউনিটে কত আসনে কত জন লড়বেন

এবারের ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে কম প্রতিদ্বন্দ্বিতা খ ইউনিটে এবং সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চ ইউনিটে। ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি আসনের জন্য লড়বেন ৬৪ জন, ‘খ’ ইউনিটে ২০ জন, ‘গ’ ইউনিটে ২১ জন, ‘ঘ’ ইউনিটে ৭৩ জন ও ‘চ’ ইউনিটে ভর্তির জন্য প্রতি আসনে ১১৪ জন শিক্ষার্থী লড়বেন।

‘ক’ ইউনিটের ১ হাজার ৮১৫টি আসনের বিপরীতে লড়বে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৭ জন। ‘খ’ ইউনিটের দুই হাজার ৩৭৮ আসনের বিপরীতে ৪৭ হাজার ৬৩২ জন, ‘গ’ ইউনিটে এক হাজার ২৫০ আসনের বিপরীতে ২৭ হাজার ৩৭৪ জন, ‘ঘ’ ইউনিটে এক হাজার ৫৭০ আসনের বিপরীতে এক লাখ ১৫ হাজার ৮৮১ জন ও ‘চ’ ইউনিটে ১৩৫ আসনের বিপরীতে ১৫ হাজার ৪৯৬ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

থাকছে কোটা পদ্ধতি

প্রতিবারের ন্যায় এবারও ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় থাকছে কোটা পদ্ধতি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীর ওয়ার্ড কোটা (কেবল ছেলে/মেয়ে/স্বামী/সন্তান) উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হরিজন ও দলিত সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী (দৃষ্টি, বাক, শ্রবণ ও শারীরিক) ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/মুক্তিযোদ্ধার নাতি/নাতনীসহ খেলোয়াড় (শুধুমাত্র বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট কোটায় ভর্তি করানো হবে। এ ক্ষেত্রে কোটায় ভর্তি প্রার্থীদেরকে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে ইউনিটের ডিন অফিস থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেখিয়ে নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করতে হবে।

পরীক্ষার্থীদের প্রতি নির্দেশনা

ঢাবির সব ইউনিটের ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর, ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংবলিত ঘড়ি ও কলম ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। ওয়েবসাইটে প্রদত্ত ভর্তি-নির্দেশিকায় উল্লেখ নেই ভর্তিসংক্রান্ত এমন কোনো তথ্য জানতে হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিট কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে।

ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন বিভাগে সমন্বয় করবেন যারা

‘ক’ ইউনিটের সমন্বয়কের দায়িত্বপালন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা, ‌‘খ’ ইউটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, ‘গ’ ইউনিটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন, ‘ঘ’ ইউনিটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয় করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী।

জালিয়াতি রোধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা

পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস, নিরাপত্তা ও ভর্তি জালিয়াতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্সের কথা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, এই প্রথম ঢাকার বাইরে আমাদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমাদের সবার জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ ও নতুন অভিজ্ঞতা। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অনিয়ম, জালিয়াতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি থাকবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি কোনো ধরণের অনিয়ম হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। যেহেতু ঢাকার বাইরেও পরীক্ষা হবে, সে জন্য আমরা বাড়তি মনিটরিং ব্যবস্থাও রেখেছি। পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাবি থেকে নিয়ন্ত্রণ হবে। প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। এছাড়া সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা যারা পরীক্ষা নিয়ে কাজ করে তাদের একটা সতর্ক দৃষ্টিও আছে। সবমিলিয়ে আমরা আশা করছি, কোন ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়াই ভালোভাবে নিতে পারব।

এইচআর/ওএফ