নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) সাপের উপদ্রব বেড়েছে। সম্প্রতি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তা, মাঠ, স্কুল, লেকপাড় ও হল সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে বিষধর সাপের। তবে ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারে সাপের কামড়ে অসুস্থদের চিকিৎসায় নেই কোনো ব্যবস্থা। এখানে সাপের বিষের কোনো প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নেই।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে ভাষা শহীদ আব্দুস সালামের হলের সামনে মনোক্লেড কোবরা বা পদ্ম গোখরা সাপের দেখা মিলেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা রিংকি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুরে সালাম হলের সামনে নিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ পদ্ম গোখরা সাপ আমার সামনে চলে আসে। আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই। এভাবে দিনে দুপুরে সাপের ভয়ে ক্যাম্পাসে আসা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বিবি খাদিজা হলের সামনে গুপ্তঘাতক ফণাহীন বিষাক্ত কালচে সাপের দেখা মিলেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। মেডিকেলে কোনো প্রতিষেধক না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।

ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. পারভেজ হাসান বলেন, ক্যাম্পাসে দিন ও রাতে সমানভাবে সাপের দেখা মিলছে। কাউকে সাপে কাটলে অ্যান্টিভেনম দেওয়ার ব্যবস্থা প্রশাসনের নেওয়া উচিত। মেডিকেলে নাপা ও গ্যাসের ট্যাবলেট ছাড়াতো কিছুই নেই। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী নুর ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) বেলা ১১ টার  খাদিজা হলের সামনে একটা বিষাক্ত সাপ দেখতে পায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাপটিকে মেরে ফেলেন হলের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরাব হোসেন মিসবাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) যে সাপটা দেখেছি তা কালচে। এই সাপটাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ানক বলা চলে। এই সাপ সাধারণত রাতে বের হয়। তবে ভয়ের ব্যাপারটা হচ্ছে কামড় দিলে বুঝাই যায় না যে সাপ কামড় দিয়েছে।

আবাসিক হলের আরেক শিক্ষার্থী মোহন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা এখনো ঝোপঝাড় মুক্ত হয়নি। করোনাকালীন সময়ে প্রকৃতির আপন গতিতে বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাপের উপদ্রবও বেড়েছে। এ জন্য প্রতিদিনই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। প্রশাসনের উচিত খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

নোবিপ্রবি মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. ইসমাত আরা পারভীন ঢাকা পোস্টকে বলেন,  আমাদের মেডিকেলে অ্যান্টিভেনম নেই। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এএসএম শরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাপের আবাস্থলে সাপ বসবাস করবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আমরা যদি আমাদের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন না রাখি তাহলে সাপ এসব স্থানে এসে বসবাস করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেই জন্য খুব দ্রুত ঝোপঝাড়গুলো পরিষ্কার করা আবশ্যক। এছাড়াও রাসায়নিক কেমিক্যাল ব্যবহার করে সাপ তাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষ্কার করছি। প্রায় ৯৫ ভাগ ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা শেষ। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি অপরিষ্কার জায়গাগুলো পরিষ্কার শেষ হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন,  সাপের উপদ্রবের বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। 

তিনি বলেন, সাপের কামড়ে অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য যে এন্টিভেনম ও লাইফ সেভিং ড্রাগ প্রয়োগ করা হয়, সেটির জন্য ডাক্তারদের বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার হয়। এছাড়াও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এখানে নেই। এই বিষয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে চলাচল করতে পারে এজন্য ক্যাম্পাসে থাকা ঝোপঝাড় দ্রুত পরিষ্কার করা হবে। 

হাসিব আল আমিন/আরএআর