ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযানের পরও ক্যাম্পাসে থামছে না ভারী যান চলাচল। কমছে না বহিরাগতদের আনাগোনাও। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।  

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে ব্যর্থ। বহিরাগতরা হরহামেশাই ক্যাম্পাসে ঢুকে ঘোরাঘুরি করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে উঠতি বয়সীরাও ক্যাম্পাসের পথ-ঘাট দখলে নিচ্ছে। 

সরেজমিনে রোববার (২৮ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা গেছে, ট্রাক, বাস, লেগুনা ও পিকআপ চলাচল করছে। রয়েছে বহিরাগতদের আনাগোনাও। অথচ ক্যাম্পাসে ভারী যান চলাচল বন্ধ ও বহিরাগতদের আনাগোনা ঠেকাতে দফায় দফায় অভিযান চালিয়েছে ঢাবি প্রশাসন। বেশ কয়েকটি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলাও দিয়েছে। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অভ্যন্তরীণ রুট দিয়ে গণপরিবহন চলাচল করে। ভারী যানবাহনের কারণে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এসব যান বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। 

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান রাসেল বলেন, ক্যাম্পাসে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এসব গাড়ি ক্যাম্পাসে যানজট সৃষ্টি করে। এতে আমরা নির্বিঘ্নে হাঁটাচলা করতে পারি না। পাশাপাশি বহিরাগতদের উৎপাত রয়েছে। শিগগিরই ক্যাম্পাসে ভারী যানবাহন চলাচল ও বহিরাগতদের আনাগোনা নিষিদ্ধ করা উচিত।

ঢাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আহমেদ সোহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব। ক্যাম্পাসে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়িগুলো একেবারে বন্ধ করা উচিত। এর বাইরে ব্যক্তিগত গাড়িগুলোও সীমিত করা উচিত।

ভারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন বলেন, সিটি করপোরেশন ও ডিএমপিকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি। কিন্তু এখনো কোনো অগ্রগতি দেখতে পাইনি। আমরা আশা করি, নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম বিষয়টি নজর রাখছে। প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানও চালিয়েছি। তারপরও যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তবে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা আবারও তাদের অবহিত করব যাতে ভালোভাবে বিষয়টি দেখভাল করে।

ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা বিষয়ে অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমরা সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছি, তারা যেন অযথা ক্যাম্পাসে ভিড় না করে। তারা যদি অনুরোধ না রাখেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হবে, জাতির ক্ষতি হবে। সবাইকে আবারো বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।

রাজধানীর কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দেশের বিভিন্ন উৎসব, আয়োজন, দিবস ও উপলক্ষ ছাড়াও এ ক্যাম্পাসে গিয়ে সময় কাটান অনেকে। সন্ধ্যা কিংবা বিকেলে বন্ধু কিংবা পরিচিতদের সঙ্গে আড্ডাস্থল হিসেবে ক্যাম্পাসকেই অনেকে বেছে নেন। 

এইচআর/আরএইচ