সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাবরিনা। তার এ অকাল প্রয়াণ মেনে নিতে পারছেন না বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্ত ট্রাক চালকের শাস্তি দাবির পাশাপাশি এমন দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

জবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক বর্ণনা ভৌমিক বলেন, চলতি বছর সাবরিনা আক্তারসহ তিনজন শিক্ষার্থীকে হারালাম আমরা। শোকের মিছিল যেন থামছে না। কত অল্প বয়সে ঝরে গেল এ প্রাণগুলো। গত সপ্তাহে ভাইভা পরীক্ষায় সর্বশেষ আলাপ হয় সাবরিনার সঙ্গে। সময়ের পরিবর্তনে বেশ ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল মেয়েটা। ছুটি নিল সব কোলাহল থেকে। মৃত্যুগুলো জরা ও বিষাদের হলেও সাবরিনার মৃত্যুর দায় আমাদের সবার। নোয়াখালী থেকে ঢাকায় আসার পথে ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। আর কত মানুষের মৃত্যু হলে সড়ক নিরাপদ হবে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নিহত সাবরিনার সহপাঠী রকি আহমেদ বলেন, দুই হাতে কবর দিয়ে আসলাম বন্ধু মিতুকে, কি যে যন্ত্রণা! গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে সোনাইমুড়ীতে রওনা দিলাম ব্যাচের ৩৫ জন। মিতুর দ্বিতীয় জানাজায় শরিক হলাম। শেষ দেখা আর হলো না। কারণ আমার চোখে মিতুর পূর্বের চেহারাটাই থাক। চাকায় পিষ্ট হওয়া, মগজহীন, বিকৃত চেহারা কেন দৃশ্যপটে থাকবে? মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মিতু তিন বোনের মধ্যে সবার বড়। অনেক কষ্ট করে তাকে ঢাকায় মানুষ করেছে বাবা। মামলা করতে ভয় করছিল আর্থিক ও চাপে। ভরসা দিলাম আমরা সহপাঠী, বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় পাশে আছি। থানায় ফোন করে এজাহার করা হলো সড়ক ও পরিবহন আইনে। কবরের বাঁশ সহপাঠীরা হাতে হাতে বহন করে দাফন সম্পন্ন করলাম। রাস্তায় রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। শুকনো মগজও পড়ে আছে। নানাবাড়ির সামনেই সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিতে রাস্তায় উঠেছিলি, রং সাইড থেকে ট্রাককে থামাতে হাত ইশারা করলি। থামবে কীভাবে, তার তো লাইসেন্স ও বয়স কোনোটাই নেই। কানে হেডফোন আর তোর খালাতো ভাইয়ের ভাষ্যমতে ইটবাহী ট্রাকের সেই ঘাতক চালক ছিল মাতাল। মিতুর ভাঙা চশমা ও রক্ত মাখা জুতা জোড়া কোলে নিয়ে কাঁদছে তোর বোন। তোর হত্যার বিচার হবে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ট্রাক চাপায় সাবরিনা আক্তার মিতু (২৩) নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত সাবরিনা আক্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নের শিলমুদ গ্রামের আমজাদ ভূঁইয়া বাড়ির মুর্তজা ভূঁইয়ার মেয়ে।

এমটি/এসকেডি