করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ধরনের সেবা নিতে না পারলেও শিক্ষার্থীদের থেকে একাধিক খাতে বিভিন্ন ধরনের ফি নেওয়া হচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে পরিবহন ফি, বিদ্যুৎ ফি, সেমিনার ফি, মেডিকেল ফি অন্যতম। শিক্ষার্থীরা এসব খাতে নেওয়া ফি ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

জানা যায়, গত বছরের মার্চ মাসে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০ মাস পর ১১ নভেম্বর ক্যাম্পাস খোলার সঙ্গে সঙ্গে সব সেবাও আবার চালু হয়। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস ও সেবা বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের থেকে বিভিন্ন খাতে টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন খাতে টাকা নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও সব বিভাগে অনলাইনে পূর্ববর্তী সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হয়েছে এবং ক্যাম্পাস খোলার পর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ধাপে ধাপে প্রায় সকল বিভাগে সশরীরে  ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু বিগত ২০ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন ধরনের সেবা না নিতে পারলেও পরীক্ষার আগমুহূর্তে বিভিন্ন খাত ধরে টাকা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব খাতের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন বলেন, করোনায় শিক্ষার্থীদের বাস চলাচল করেনি। সেমিনার কক্ষ বন্ধ ছিল, বিদ্যুৎও ব্যবহার করিনি; তবুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের ওপর ফি চাপিয়ে দিয়ে আদায় করে নিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে অতিরিক্ত টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, এতদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বাড়িতেই ছিলাম। অনলাইনে সেমিস্টারের সকল ক্লাস করেছি। কোনো সেবাই নেইনি। এরপরও আমাদের থেকে সকল ফি দেওয়া লাগলো।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাসকের মতো আমাদের সেমিস্টার ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় এসব ফি নেয়, তখন ফি না দেওয়ার কোনো উপায় থাকে না। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন  শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন হওয়ার পরিচয় দিক।

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন বলেন, সেবা না দিয়ে ফি নেওয়া কোন ধরনের নৈতিকতা? সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী কষ্ট করে লেখা পড়া করেন। এই করোনাভাইরাসের প্রকোপে শিক্ষার্থীদের কষ্ট আরও বেড়েছে। তাদের কথা ভেবে হলেও ফি মওকুফ করার প্রয়োজন ছিল।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ ডন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পরও করোনার সময়ে নেওয়া পরিবহন ফি, মেডিকেল ফি, বিদ্যুৎ বিল শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। আমরা চাই অতিদ্রুত এসব খাতের ফি দ্রুত ফেরত দিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম বলেন, করোনার কারণে এর আগে এক সেমিস্টারে এসব খাতের টাকা মওকুফ করা হয়েছিল এবং চলতি সেমিস্টার থেকে এসব খাতের টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ইউজিসি কেও অবগত করা হয়েছে। 

শিপন তালুকদার/এমএসআর