ইউজিসির সুপারিশ, শিক্ষাবিদদের পরামর্শ ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ হচ্ছে না। এটি চালু রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সান্ধ্য কোর্স চালু থাকলেও এতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি বিষয়টি গঠিত কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স সম্পূর্ণ বন্ধ হবে না। নিয়ন্ত্রিত সান্ধ্য কোর্স থাকবে। আগে ইচ্ছে মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করানো, একটি বিভাগে একাধিক কোর্স চালু করা, আয়-ব্যয়ের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকা এবং একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া এসব কোর্স চলত। এ ধরনের অনিয়ম দূর করে জাতীয় প্রয়োজনে যেখানে দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, সে এরিয়াগুলোতে সান্ধ্য কোর্স আমরা চালু রাখব।

লিখিত কোনো নীতিমালা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এটি হয়ে গেলে তা চূড়ান্ত আকারে প্রকাশ করা হবে।

এর আগে ২০১৯ সালের মে মাসে পাঁচ জন ডিনের সমন্বয়ে সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরীকে। ওই কমিটি বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে পরিচালিত সব ধরনের সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছিল। একইসঙ্গে সেসময় সান্ধ্য কোর্স পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার কথা বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত সে নীতিমালা হয়নি।

এছাড়া ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সমাবর্তনে যোগ দিয়ে সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন খোদ রাষ্ট্রপতি। শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের একটি অংশসহ নানা মহল থেকে সমালোচিত হয় এ কোর্স।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যাকালীন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কোর্স বন্ধ করে ডিপ্লোমা, শর্ট কোর্স, ভোকেশনাল ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালুসহ প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের মূলধারার শিক্ষায় আনার প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

২০০২ সালে ঢাবিতে সান্ধ্য কোর্স চালু করা হয়। সর্ব প্রথম ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ এ কোর্স চালু করে। সান্ধ্য কোর্স থেকে বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকায় দ্রুত অন্য ইনস্টিটিউটগুলোর কাছে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাবিতে নিয়মিত কোর্সের বাইরে মোট ৩৫টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সান্ধ্য কোর্স আছে। মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট, ট্রেনিং কোর্সসহ অনিয়মিত এসব কোর্সের সংখ্যা ৬৯। এর মধ্যে ৫১টি মাস্টার্স, ৪টি ডিপ্লোমা, ৭টি সার্টিফিকেট ও ৭টি ট্রেনিং কোর্স। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কোর্সের বাইরে ১০৫টি ব্যাচে এসব কোর্সে বছরে ৭ হাজার ৩০২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। সবচেয়ে বেশি সান্ধ্য কোর্স আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে।

এইচআর/এসএসএইচ