শিক্ষকের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘটনায় বন্ধ থাকা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার (৯ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন পর ক্লাস শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

এর আগে শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় আবাসিক ৭টি হল খুলে দেওয়া হয়। কুয়েটের জনসংযোগ ও তথ্য শাখার মুখপাত্র রবিউল ইসলাম সোহাগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সকাল ৮টায় ক্লাস শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি রয়েছে।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ৩ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের হলছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর ৭ জানুয়ারি হল ও ৯ জানুয়ারি ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী আজ রোববার সকালে ক্লাস শুরুর সময়ের আগেই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হয়।

৩০ নভেম্বর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ সেলিম হোসেন ক্যাম্পাস-সংলগ্ন ভাড়া বাসায় মারা যান। শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠে মৃত্যুর দিন দুপুরে বাসায় ফেরার পথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অধ্যাপক সেলিমকে বিভাগে তার কক্ষে নিয়ে যান।

সেখানে তার ওপর মানসিক নিপীড়ন চালানো হয়। এছাড়া কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ কয়েকজন ছাত্র তাদের মনোনীত প্রার্থীকে ডাইনিং ম্যানেজার করার জন্য হল প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত চাপ দিয়ে আসছিলেন।

ওই শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল ছুটি ঘোষণা করা হয়। সেই ছুটি দুই দফা বাড়িয়ে ৭ জানুয়ারি হল ও ৯ জানুয়ারি ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষকরা।

বুধবার (৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েট ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান, হাসান আব্দুল কাইয়ুম, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান রাজ্জাক ও রিয়াজ খান নিলয়কে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া আরও ৪০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাসিত শিক্ষার্থীরা তারা জানান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের একাডেমিক ক্ষতি কাটিয়ে সফলভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে চান। রোববার সকাল থেকেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। অনেকেই খোশগল্পে মেতে উঠেছে সহপাঠীদের সঙ্গে।

মোহাম্মদ মিলন/এমএসআর