জাতীয় শহীদ মিনার | ছবি- ঢাকা পোস্ট

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বছরের পর বছর আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিকে। স্মৃতির পটে ভেসে ওঠে শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র সেই কয়েকজন সাহসী তরুণের মুখচ্ছবি, যারা সেদিন নিজেদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় ব্রতী ছিলেন।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত স্মৃতিময় এ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ যেন হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী, ধর্ষক ও মাদকসেবীদের আখড়া। খুন-ধর্ষণ ও মাদকের ছড়াছড়িতে প্রতিনিয়ত অপবিত্র হচ্ছে পবিত্র এ স্থান। যার সর্বশেষ সংযোজন ধর্ষণের চেষ্টায় হত্যার শিকার হওয়া ১৪ বছরের এক কিশোরী।

গত ৩০ জানুয়ারি শহীদ মিনারের বেদীর পেছন থেকে ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরীর বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সংস্থাটির তদন্তে জানা যায়, আবুল খায়ের নামের এক যুবক তাকে ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা করে।

যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত এলাকা করা হয়নি সেহেতু এখানে সবাই অবস্থান করতে পারে। যখন কেউ এর অপব্যবহার করতে চায়, তখন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে যায়। যদিও আমরা এটাকে মোটেও ছোট করে দেখছি না। আমাদের প্রক্টর টিম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়মিত টহল দিচ্ছে

অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী, প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এখানেই শেষ নয়, কিছুদিন পরপর সেখানে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান করা একাধিক ব্যক্তি ঢাকা পোস্টকে দিয়েছেন ভয়ঙ্কর নানা তথ্য। তারা জানান, সারাদিন এখানে মাদকসেবীরা অবস্থান করে। বেদীর পেছনের অংশে বসে গাঁজা সেবন করে। কিছু রিকশাওয়ালা ও ভবঘুরে প্রকৃতির লোক এখানে গাঁজা বিক্রি করে। শহীদ মিনারের পেছনে যে মাজার রয়েছে সেখানে কাজ করেন এমন কিছু ব্যক্তিও গাঁজা বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত। রাত গভীর হলে নানা অসামাজিক কার্যক্রম চলে সেখানে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা ও পবিত্রতা কেন বারবার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘অপরাধ যেকোনো জায়গায় হতে পারে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত এলাকা করা হয়নি সেহেতু এখানে সবাই অবস্থান করতে পারে। যখন কেউ এর অপব্যবহার করতে চায়, তখন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে যায়। যদিও আমরা এটাকে মোটেও ছোট করে দেখছি না। আমাদের প্রক্টর টিম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়মিত টহল দিচ্ছে।’

আমাদের লোকবল কম। পলাশী থেকে ঢাকা মেডিকেল এলাকা পর্যন্ত একটা টিম থাকে। মাঝখানে বড় যে একটা দূরত্ব, এটাই সমস্যা। এক বছর বা তার আগে এখানে আমাদের নিয়মিত একটা টিম ছিল কিন্তু সেটা আর নাই

মো. মামুন অর রশিদ, ওসি, শাহবাগ থানা

কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অঘটনমুক্ত রাখা যায়— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি, নাগরিকদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা সবাই যদি দায়িত্ব পালন করি এবং এখানে এসে যদি কেউ অযথা ঘোরাফেরা না করি তাহলে অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মো. মামুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের লোকবল কম। পলাশী থেকে ঢাকা মেডিকেল এলাকা পর্যন্ত একটা টিম থাকে। মাঝখানে বড় যে একটা দূরত্ব, এটাই সমস্যা। এক বছর বা তার আগে এখানে আমাদের নিয়মিত একটা টিম ছিল কিন্তু সেটা আর নাই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে জানিয়েছি, এখানে একটা ফিক্সড পুলিশ টিম প্রয়োজন।

এছাড়া এখানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।

এত সব ঘটনার পরও কেন শহীদ মিনার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না— এমন প্রশ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও। তাদের প্রশ্ন, নির্মম এমন হত্যাকাণ্ডের দায় কার, কে নেবে ক্ষতিগ্রস্ত ওই কিশোরীর পরিবারের দায়িত্ব? শুধুমাত্র একুশে ফেব্রুয়ারি আসলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় কিন্তু কেন? প্রশ্ন থেকেই যায়!

এমএআর/