শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্য সেন হল থেকে বহিষ্কার করা হয় উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সিফাত উল্লাহকে।

বহিষ্কৃত হওয়ার পরও হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে সিফাত উল্লাহ প্রকাশ্যে থাকছেন। হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমনই অভিযোগ তুলেছেন। বুধবার গত রাতে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারীদের মধ্যে হলের কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায়ও সিফাত উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তারা।   

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ও ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী ইমরান সাগরের ছত্রছায়ায় হলে থাকছেন সিফাত। তবে ইমরান সাগর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূর্যসেন হলের একাধিক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিফাত প্রতিনিয়ত হলে অবস্থান করেন এবং আগের মতোই হলে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এমনকি হলে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায়ও জড়িত থাকেন। হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ইমরান সাগরের ছত্রছায়ায় তিনি হলে থাকেন। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে সিফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় ঢাকা পোস্ট। তার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই কেটে দেন। হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ইমরান সাগর ঢাকা পোস্টকে বলেন, সে তো গতকাল হল থেকে চলে যাওয়ার কথা। তবে সে থাকলেও এটা তো হল প্রশাসন দেখবে। আমার ছত্রছায়ায় থাকার কোনো সুযোগ নেই, হলে আমার অতিরিক্ত কোনো কক্ষ নেই।

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক মকবুল হোসেন ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জানি তিনি হলে থাকেন না। তার হলে থাকা সম্পূর্ণ নিষেধ। লুকিয়ে সে হলে থাকেন কি না, তা হাউজ টিউটরদের দেখতে বলব। হলে তারা আসা-ই নিষিদ্ধ। হলে থাকলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ১২ ডিসেম্বর হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে সিফাত উল্লাহ কর্তৃক নির্যাতনের পর হল প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী কাজী পরশ মিয়া। অভিযোগের ভিত্তিতে সূর্য সেন হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক আহম্মদ উল্লাহকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে গত ২১ ডিসেম্বর একটি নোটিশের মাধ্যমে সিফাতকে হল থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। নোটিশে বলা হয়, ভবিষ্যতে আপনাকে হলে অবস্থান করতে দেখা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ৭ নভেম্বর রাতে দুই শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে তুলে ডেকে নিয়ে মারধর করেন সিফাত উল্লাহ ও তার এক বন্ধু। সেই ঘটনার পর তার কাছ থেকে মুচলেকা নেয় হল প্রশাসন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসেও একটি মারধরের ঘটনায় ঢাবি থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন সিফাত। তবে সেই আদেশ পরে তুলে নেওয়া হয়।

এইচআর/আরএইচ