বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়নি। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের পরিচয়পত্র সরবরাহ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আইডি কার্ড বা পরিচয়পত্র একজন শিক্ষার্থীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় একটি বস্তু, যা তার পরিচয় বহন করে। কিন্তু ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি ক্লাস শুরু হলেও আইডি কার্ড পেতে ভোগান্তি, বারবার ঘুরেও আইডি কার্ড না পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। দুই বছর পরে এসেও তাই আইডি কার্ড না পেয়ে হতাশা ও নানাবিধ সমস্যার কথা বলছেন একাধিক শিক্ষার্থী। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা বিভাগ থেকে আইডি কার্ড দেওয়া হয়। এখানে এই আইডি কার্ড তৈরির জন্যে মাস্টাররোল শ্রমিক (অস্থায়ী) হিসেবে কাজ করতেন আশরাফুল কালাম নামে মাত্র একজন কর্মচারী। কিন্তু বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে স্থায়ী চাকরি হওয়ার কারণে তিনি ছাত্রবিষয়ক বিভাগ থেকে চলে যান। এতে আইডি কার্ড তৈরি কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে বর্তমানে প্রিন্টিং মেশিন নষ্ট হওয়ায় আইডি কার্ড তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি বন্ধ আছে বলেও জানা যায়। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এখনও কোনো স্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। 

এ নিয়ে সম্প্রতি ইসমাত জাহান নীল নামে একজন শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, প্রশাসনের কাছে স্টুডেন্ট আইডি চাইতে গেলে বলে প্রিন্টার অকার্যকর এবং কবে দেওয়া হবে সে বিষয়ে তারা জানাতেও পারছে না। ফলে পাসপোর্ট আবেদনসহ বিভিন্ন কাজে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ব্যবহার করতে পারছি না।

২০১৯-২০ সেশনের পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী রায়হান আবিদ বলেন, স্টুডেন্ট আইডি কার্ডটি একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর পরিচয় বহন করে। যা একজন শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমানে বাসের হাফ পাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থাপনায় প্রবেশ, পাসপোর্ট আবেদনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণকাজে ব্যবহৃত হয় স্টুডেন্ট আইডি। করোনা মহামারির কারণে ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ সময়ে পায়নি তাদের স্টুডেন্ট আইডি কার্ড। কিন্তু বর্তমানে ক্যাম্পাস ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু থাকা সত্ত্বেও দেওয়া হচ্ছে না পরিচয়পত্র। ফলে আমাদের নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে বাকৃবির সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, আশরাফুল কালাম নামে যে কাজ করত তিনি আইডি কার্ড তৈরির বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। কিন্তু তার স্থায়ী চাকরি হওয়ার কারণে সে এখান থেকে চলে যায়। পরে তাকে সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন কাজ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রিন্টার মেশিন নষ্ট হয়েছে। এটি মেরামত অথবা কেনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ খাতে বছরে খুবই কম বাজেট দেওয়া হয়। কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে কথা বললেও কোনো ফলাফল আসেনি।

এ বিষয়ে কথা হয় ছাত্র বিষয়ক বিভাগের সাবেক কর্মচারি আশরাফুল কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ২০১৭ সালে ছাত্র বিষয়ক বিভাগে কাজ শুরু করি। আমি ভালোভাবেই কাজ করতাম। কোনো অভিযোগ ছিল না আমার বিরুদ্ধে। ৩ বছর কাজ করার পরেও আমি সেখানে স্থায়ী নিয়োগ পাইনি। পরে অন্য বিভাগে নিয়োগ পাওয়ায় সেখানে চলে যাই। তারপরেও মাঝে মাঝে আমি কাজ করে দিয়ে আসি। এক সঙ্গে দুই কাজ করা একটু ঝামেলা। তাই এখন নিয়মিত যেতে পারি না। আমাকে নিয়োগ দিলেই আবার সেখানে কাজ করব।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. রাকিব উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে দ্রুতই এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.এ.কে.এম. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, প্রিন্টার মেরামতের জন্যে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশরাফুল কালামকে আমাদের বিভাগে বদলি করে ছাত্রবিষয়ক বিভাগে আনার ব্যবস্থা করব। উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান করা হবে।

আরআই