উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা গত দুদিন উপাচার্যের কুশপুতুল পুড়িয়েছেন।

এবার তৃতীয় দিনের মতো রোববার উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের কুশপুতুলে আগুন দিলেন তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, উপাচার্য পদত্যাগ না করলে প্রতিদিনই কুশপুতুলে আগুন দেওয়া হবে। 

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের শত ঘণ্টারও বেশি পার হয়েছে। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী। সুস্থ বোধ করলে পুনরায় তারা ফিরে আসছেন অনশনস্থলে।  

রোববার রাত সাড়ে ১০টায় মশাল মিছিল শেষে উপাচার্যের কুশপুতুলে আগুন দেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চ থেকে শুরু হয়, পরে অনশনস্থল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার মুক্ত মঞ্চে এসে শেষ হয়।

শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল

শিক্ষার্থীদের স্লোগানে স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আশেপাশের পরিবেশ। ‘এক-দুই-তিন-চার, ফরিদ তুই গদি ছাড়‘, ‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো এক সাথে‘ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। 

এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের বাসভবনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে নাফিসা আনজুম বলেন, আমাদের অনশনরত ভাই-বোনেরা যখন অনশনে কষ্ট করছেন, ভিসি তখন আরামে দিন কাটাচ্ছেন। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিদিনই আন্দোলনে উপাচার্যের কুশপুতুলে আগুন দেওয়া হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে যা করা দরকার, অনতিবিলম্বে তা করতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করে বিবৃতি দিয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শনিবার দিবাগত রাতে শিক্ষামন্ত্রী ভার্চুয়ালি আলোচনা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন। আলোচনায় কোনো সমাধান আসেনি। 

শা‌বিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। গত শনিবার ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা

পরদিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও হল ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও হল ছাড়ার ঘোষণা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।

জুবায়েদুল হক রবিন/আরএইচ