ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের গেস্টরুমে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাঠানো হয় গণরুমে। সেখানে জ্ঞান হারান তিনি।    

নির্যাতনের শিকার এই শিক্ষার্থীর নাম মো.আকতারুল ইসলাম। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে নির্যাতনের এই ঘটনা ঘটে।  

এ বিষয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে হল প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন আকতারুল ইসলাম।
 
ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান রাজু, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শুভ, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ কাজল, সমাজ কল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ামিন,  আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম, লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম রোহান। 

নির্যাতনে অভিযুক্তরা 

এরা প্রত্যেকে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশী আবু ইউনুস ও রবিউল ইসলাম রানার অনুসারী। তারা দু’জনেই ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।

আকতারুল ইসলামের সঙ্গে ওই রাতে আরও যাদের গেস্টরুমে ডেকে নেওয়া হয়েছিল তাদের কাছ থেকে অভিযুক্তদের নাম জানা গেছে। 

জানা যায়, আকতারুলকে গেস্টরুমে ডেকে বৈদ্যুতিক বাল্বের দিকে ১ ঘণ্টা তাকিয়ে থাকতে বলা হয়। ১০ মিনিট তাকানোর পর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরবর্তীতে তার ইসিজি করানো হয়। 

তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না আকতারুল। তিনি বলেন, ভাইয়েরা শুধু হালকা গালিগালাজ করেছিল। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আকতারুলের বন্ধুদের আগে থেকেই বলে দেওয়া হয়েছে কাউকে কিছু না বলতে। 

যাদের বিরুদ্ধে এই নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তারা বলছেন,আকতারুল ইসলাম গেস্টরুমে যায়নি। সে আগে থেকেই অসুস্থ, গণরুমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে।

হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী আবু ইউনুস বলেন, তারা যে গেস্টরুম নিচ্ছে সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। হল প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান থাকবে যে দোষীদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমি রাত ৩টার সময় হলে গিয়েছিলাম। ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলেছি, সাপোর্ট দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা আবাসিক শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম সানার নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। 

এ ঘটনায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হলগুলোতে মাঝে-মধ্যেই এমন নির্যাতনের খবর আসে। সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ছিল বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড। গেল বছরের ডিসেম্বরে এ ঘটনায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।  

এই ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয় তাতে বলা হয়, তারা পরস্পর যোগসাজশে ‘শিবির সন্দেহে’ আবরার ফাহাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। 

কুষ্টিয়ার ছেলে আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

আবরারের ঘটনায় বুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ হয়। সে প্রেক্ষাপটে বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এইচআর/এনএফ