জগন্নাথ শীল

জন্ম থেকে দুই হাত নেই। তবুও অন্যের কাছে কখনো সাহায্য চাননি। বাচ্চাদের পড়িয়ে সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় তার রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জীবনযুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের বৃদ্ধ জগন্নাথ শীল (৭০)।

সরেজমিনে জগন্নাথ শীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট্ট একটি ভাঙা টিনের ঘরে স্ত্রী মিলন রানীকে নিয়ে থাকেন তিনি। পাশের আরেকটি টিনের ঘরে ছেলে থাকেন। কিন্তু ঘরের দরজা জানালা নেই। এক ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে জগন্নাথের সংসার।

হাট-বাজার থেকে শুরু করে সংসারের সকল কাজ বিশেষ কৌশলে করেন তিনি। পা দিয়েই লেখাপড়াসহ অধিকাংশ কাজ করেন। সহানুভূতি আর সরকারের সার্বিক সহায়তার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান তিনি।

জানা গেছে, মেট্রিক পাস করা জগন্নাথের কপালে জুটেনি চাকরি। তবুও হাল ছাড়েননি। স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালাতেন। কিন্তু করোনার কারণে সেটাও হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে তিনি বেকার হয়ে পড়েছেন। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। 

এর মধ্যে জগন্নাথের পৈতৃক সম্পত্তি বেদখলে চলে গেছে। উপজেলার কয়েড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও ছোলায়মান নামের দুই ব্যক্তি জোরপূর্বক তার পৈতৃক ৭২ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন। এজন্য তিনি আদালতের দারস্থ হলে পরবর্তীতে আদালত তার নামে জমির ডিক্রি জারি করেন। পরে আদালত জমি বুঝিয়ে দেয়ার পর দখলদাররা পুনরায় ডিক্রি জারি বাতিলের জন্য মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী জগন্নাথ খুবই কষ্টে দিন পার করছেন। কিন্তু কারোর কাছে হাত পাতেননি। তার দুই ছেলের একজন বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে। ছোট ছেলেটাও বেকার করোনার কারণে। এতে চরম কষ্টে আছেন পরিবার নিয়ে। 

শারীরিক প্রতিবন্ধী জগন্নাথ শীল বলেন, জন্ম থেকে দুই হাত নেই। অভাব অনটনের মাঝে ১৯৬৯ সালে  মেট্রিক পাস করি। কিন্তু মেট্রিক পরীক্ষার আগে বাবা ৬৫ টাকা ফিস দিতে পারেননি। সেই সময় ঢাকা গিয়ে মান্না ও কবিতা অভিনীত মলুয়া ছবিতে অভিনয় করি। অভিনয় করে যে টাকা পেয়েছিলাম সেই টাকা দিয়ে মেট্রিক পরীক্ষা দেই। কিন্তু কারো কাছে হাত পাতিনি। এরপর দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। তাদের বিভিন্ন খবর দিয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর উপজেলার নিকরাইল বাজারে বই বিক্রির ব্যবসা শুরু করি। তখন টেক্সবুক বোর্ডের লাইসেন্স পেয়েছিলাম। ভালই চলছিল ব্যবসা। পরে জিয়া সরকার ক্ষমতায় এসে লাইসেন্স বাতিল করে। এতে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সারাদেশে সরকার বই বিতরণ শুরু করে। ২০ বছর ব্যবসার পর বই বিক্রি ছেড়ে দেই। এছাড়া বাপ-দাদার জমিও অন্যরা জবর দখল করে আছে। পৈতৃক ভিটা রক্ষার জন্য আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। 

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী অসহায় জগন্নাথ শীলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। 

এসপি