কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাটে পিকআপ ভ্যানচাপায় একসঙ্গে ছয় ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মা মৃণালীনি বালা সুশীল (৬০)। এখনো স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এরই মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের অনবরত সাক্ষাতকার আর ছবি তোলায় বিরক্ত তিনি। 

মৃণালীনি বালা সুশীল ক্যামেরা দেখলে মুখ লুকানোর চেষ্টা করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি ছবি তুলতে তুলতে বিরক্ত, কি হবে এত ছবি তুলে। আমার সন্তানদের কি আর ফিরে পাওয়া যাবে? আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ আর নিয়েন না। আমাদের চোখের পানি নিয়ে আর খেলবেন না। আজ এক মাস পার হলেও যারা আমার সন্তানদের মেরে ফেলছে তাদের কোনো বিচার হয়েছে কি?

শুক্রবার (০৪ মার্চ) বিকেলে গণমাধ্যমের কয়েকজন ক্যামেরা নিয়ে মৃণালীনি বালা সুশীলের বক্তব্য নিতে গেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, হাতজোড় করতেছি বাবারা। আমার ছবি আর তুলিও না। কেউ কিছু একটা দিলে ছবি তুলতে চাই। আমার স্বামী যখন বেঁচে ছিল কারও কাছ থেকে এক মুঠো চালও নিতে দেন নাই। আমার টাকা-পয়সার দরকার নাই, বিচার চাই যারা আমার সাজানো পরিবারটা ধ্বংস করছে।

এ সময় স্বজনরা বলেন, আপনারা কিছু মনে করিয়েন না। আসলে ছবি তুলতে তুলতে বিরক্ত হয়ে গেছে উনি। একসঙ্গে ছয় সন্তান হারিয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন। 

প্রসঙ্গত, বাবা সুরেশ চন্দ্রের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানচাপায় অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রক্তিম সুশীল মারা যান। 

ঘটনার ১০ দিন আগে তাদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয়। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা ৯ ভাইবোন বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। সেখানকার একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে একসঙ্গে ৯ ভাইবোন (৭ ভাই ও ২ বোন) হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চারজনের মৃত্যু হয়, বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই। ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্র সুশীলের মেয়ে মুন্নী সুশীল। আহত হন সুরেশ চন্দ্রের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে।

এদিকে পাঁচ ভাইকে চাপা দেওয়া পিকআপ ভ্যানের চালক সাহিদুল ইসলামকে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করেছে র‌্যাব। তাকে আটকের পর র‌্যাব জানায়, ঘটনার দিন রাস্তায় বেশি কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও চালক দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দেওয়ার জন্য বেপরোয়াভাবে পিকআপটি চালাচ্ছিলেন। কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারতদের দূর থেকে লক্ষ্য করেননি তিনি। ফলে তাদের কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারায় দুর্ঘটনা ঘটে।

সাইদুল ফরহাদ/এসপি