মৃত জেলিফিশে ছেয়ে গেছে কুয়াকাটা সৈকত
কুয়াকাটার আন্ধারমানিক মোহনা থেকে রামনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত ছেয়ে গেছে মরা জেলিফিশে। এসব জেলিফিশ পচে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। উপকূলের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তবে এগুলো অপসারণে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
উপকূলের জেলেরা জানিয়েছেন, এক মাস ধরে বঙ্গোপসাগরে ভাসছে অসংখ্য জেলিফিশ। এতে বেকায়দায় পড়েছেন তারা। কারণ সমুদ্রে জাল ফেললে আটকে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার জেলিফিশ। খুলতে গিয়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে জেলেদের জাল। তাই বাধ্য হয়ে জাল তুলে নিচ্ছেন মৎস্যজীবীরা।
বিজ্ঞাপন
গত ১৫ দিন ধরে বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপকূলের শত শত জেলে।
সমুদ্রসৈকত ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতের আন্ধারমানিক মোহনার লেম্বুরচর থেকে পূর্ব দিকে রামনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে হাজারো জেলিফিশ। এ ছাড়া কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ গভীর সমুদ্রে গড়ে ওঠা চরবিজয়ের বালুতে জেলিফিশে ছেয়ে গেছে। এগুলোতে পচন ধরে জন্ম নিয়েছে একধরনের পোকা এবং দুর্গন্ধে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। পাশেই বেকার মৎস্যশ্রমিকরা ছেঁড়া জাল বুনছেন। কেউ কেউ আবার শেওলা ধরা জাল ধুয়ে রোদে শুকাচ্ছেন। মাছ ধরা ট্রলারগুলো নিরাপদে তুলে রাখছেন।
বিজ্ঞাপন
কাউয়ারচর এলাকার জেলে মুছা বলেন, এক মাস ধরে সমুদ্রে নোনা (জেলিফিশ স্থানীয় জেলেদের ভাষায় নোনা) ভাসছে। তবে দিন দিন মৃত নোনার সংখ্যা বেড়েই চলছে। আজকের (৪ মার্চ) জোয়ারে বিপুলসংখ্যক নোনা ভেসে আসেছে। এত নোনা আমার বয়সে দেখি নাই।
চর গঙ্গামতি এলাকার জেলে হারুন প্যাদা বলেন, প্রতিবছরই নোনা (জেলিফিশ) আসে। কিন্তু এ বছর পরিমাণে অনেক বেশি। জাল ফেললে অতিরিক্ত জড়ানোর কারণে স্রোতে জাল ছিঁড়ে যায়। সব জাল কূলে নিয়ে এনেছি। এখন বেকার। তাই ছিঁড়া জাল মেরামত করছি।
গঙ্গামতি এলাকায় ঘুরতে যাওয়া পর্যটক ইমন হাসান বলেন, জেলিফিশগুলো দ্রুত অপসারণ করে বালুচাপা দেওয়া উচিত। তা না হলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এখনই তো দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়াচ্ছে।
ইকোফিশ-২ প্রকল্পের পটুয়াখালী জেলার সহকারী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, এ জেলিফিশগুলো জোয়ারের স্রোতে ভেসে এসে সৈকতের বালুতে আটকে মারা যায়। এরা সাঁতার কাটতে পারদর্শী না বিধায় ভাটার স্রোতে নেমে যেতে পারে না। তবে হঠাৎ জেলিফিশের পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে সমুদ্রের পানির স্বাস্থ্য ঠিক নেই। আবার এ-ও হতে পারে, জেলিফিশ যেসব মাছের খাবার, সেসব মাছ কমে গেছে। ফলে জেলিফিশের আধিক্য বেড়ে গেছে।
কলাপাড়া উপজেলো সিনিয়র মৎস্য কর্তকর্তা অপু সাহা জানান, মেরুদণ্ডহীন এসব প্রাণী স্রোতের উল্টো চলতে পারে না। তবে এত জেলিফিশ কী কারণে ভেসে এসেছে, সেটা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যসচিব আবুল হাসনাত মো. শহিদুল হক বলেন, জনবল-সংকটের কারণে কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসা জেলিফিশগুলো অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এগুলো পচে পরিবেশের তেমন একটা ক্ষতি হচ্ছে না। কারণ জেলিফিশের শরীরে ৯৫ শতাংশ পানি। তাই দু-এক দিনের মধ্যে পানিতে মিশে যায়।
কাজী সাঈদ/এনএ