২০০৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতের ঘটনা। সেই রাতে দায়িত্ব পালনকালে দুর্বৃত্তের হাতে প্রাণ যায় তিন গ্রাম পুলিশের। নিমিষেই শেষ হয়ে যায় তিনটি পরিবারের স্বপ্ন। তবে এরই মধ্যে এক পরিবারের স্বপ্নকে টিকিয়ে রেখেছেন এক সংগ্রামী নারী। তিনি হলেন সাজেদা বেগম।

সাজেদা বেগম জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার স্বামী মরহুম আব্দুল জলিল ছিলেন গ্রাম পুলিশ। সেই রাতে ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের আয়মাপুর, মিনিগাড়ি, কোনাপাড়া  গ্রামের দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশ আব্দুল জলিলসহ তিনজন গ্রাম পুলিশকে ফাঁসিতলা এলাকায় দুর্বৃত্তরা জবাই করে হত্যা করে। 

আব্দুল জলিল সরদার মারা যাওয়ার সময় তার দুই মেয়ে মুর্শিদা পারভিন, খুর্শিদা পারভিন এবং স্ত্রী মোছা. সাজেদা বেগমকে রেখে যান। আব্দুল জলিলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন সাজেদা বেগম। কিন্তু সন্তানদের কথা চিন্তা করে জীবন সংগ্রামে নেমে পড়েন তিনি।

সেই সংগ্রামে স্বামীর শূন্য গ্রাম পুলিশের পদ ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সেই চাকরির টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খান তিনি। এমনকি দুই কন্যার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে উঠে। ঠিক তখনই আব্দুল জলিলের পরিচিত এক পুলিশ সদস্য লোকমান হাকিম তাদের দুই কন্যার লেখাপড়ার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এতে সাজেদার মেয়ে মুর্শিদা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন। 

এরপর ২০১৪ সালে একটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন এবং বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে স্বাস্থ্য ক্যাডারে উর্ত্তীণ হয়ে মেডিকেল অফিসার হিসাবে চাকরিতে যোগদান করেন। ছোট মেয়ে খুর্শিদাও এসএসসি, এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন এবং রুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন।

সাজেদা বেগমের সংগ্রামী জীবনের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে জয়পুরহাট জেলা পুলিশ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষ্যে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেছেন। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকেলে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা তাঁর নিজ কার্যালয়ে তাকে সংবর্ধনা দেন।

এসময় পুলিশ সুপার বলেন, স্বামীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সকল প্রতিকূলতা জয় করে মেয়েকে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সাজেদা বেগম গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। এটি সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ ও প্রশাসন), মোসফেকুর রহমান, (সদর সার্কেল), সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (পাঁচবিবি সার্কেল) ইশতিয়াক আলম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শাম্মীম আজিজ সাজ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি মাহবুবা সরকার, হৈমন্তী সরকার, আইরিন সুলতানাসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

চম্পক কুমার/এমএএস