ফেলে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেতে মায়ের আবেদন
ফেলে যাওয়া নবজাতক সন্তানকে দেখছেন মা
সন্তানের বাবার পরিচয় দিতে পারবেন না, সমাজের মানুষ নানা কথা বলবে, এসব ভেবে সদ্যোজাত সন্তানকে ফেলে পালিয়ে যান মা। ১৯ দিন আগে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ঘটে এমন নির্দয় ঘটনা। তবে নাড়ির টানে অনুতপ্ত হয়ে ফেলে যাওয়া সেই সন্তানের কাছে ফিরেছেন মা। নিজের সন্তানকে ফিরে পতে যেতে হয়েছে আদালতে।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের আদেশে সন্তানকে ফিরে পান তিনি।
বিজ্ঞাপন
নুরনাহার হীরার বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের হাড়দ্দহ গ্রামে। তিন বছর আগে তার স্বামী তাকে ছেড়ে ভারতে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। হীরার বাবা আব্দুর রশীদ ভ্যান চালান দেবহাটা উপজেলার পূর্ব কুলিয়া এলাকায়।
অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে নুরনাহার হীরার গর্ভে আসে সন্তান। এরপর জন্ম নেয় একটি ছেলেসন্তান। গত ২১ জানুয়ারি সকালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যারেজের পাশে একটি কম্বলের মধ্যে জড়িয়ে নবজাতক সন্তানটিকে ফেলে যান নুরজাহান। এরপর থেকে নবজাতকটি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকে। ঘটনাটি লিখিতভাবে সমাজসেবা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
এদিকে নবজাতকটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য সাতক্ষীরা শিশু আদালতে আবেদন করেন নবজাতকের মাসহ আরও পাঁচ দম্পত্তি।
নুরনাহার হীরা জানান, আমি ১০ মাস ১০ দিন পেটে রেখে নিজের সন্তানকে ফেলে গিয়েছিলাম। আমি অনুতপ্ত, লজ্জিত। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। বাচ্চাটিকে ফিরে পেতে আমি উকিলের কাছে গিয়েছিলাম। আদালতের বিচারক আমাকে আমার বাচ্চা ফিরিয়ে দিয়েছেন। সন্তান বাবার পরিচয় দিতে পারবে না, সমাজের মানুষ নানা কথা বলবে, এটা ভেবে আমি সন্তানকে ফেলে গিয়েছিলাম। আমি আমার সন্তানকে মানুষ করব।
আদালতে নিযুক্ত নুরনাহার হীরার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহনয়াজ পারভীন মিলি জানান, নবজাতকটি ফেলে যাওয়ার পর মা হীরা অনুতপ্ত হন। আবারও নিজের সন্তানকে কাছে পেতেও চান। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতকটি দেয়নি, যেহেতু ঘটনাটি তারা আগেই আদালতকে অবহিত করেছে।
নুরনাহার হীরার দাবি, কুলিয়া এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম এই সন্তানের বাবা। তার সঙ্গে হীরার সম্পর্ক রয়েছে। তবে আনোয়ারুল জানিয়েছেন, আমার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও এই সন্তানের বাবা আমি নই। এ ব্যাপারটিও কীভাবে আইনগতভাবে সমাধান করা যায়, চেষ্টা করা হবে।
অ্যাডভোকেট শাহনয়াজ পারভীন মিলি
এরপর নবজাতকটির মা নুরনাহার হীরা ও চার নিঃসন্তান দম্পত্তি বাচ্চাটিকে নিজের কাছে নিতে আবেদন করেন। আদালত যাচাই-বাছাই করে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনায় বিচারক উল্লেখ করেছেন, মায়ের কাছে সন্তানকে প্রদান করাই সমীচীন ও সর্বোত্তম বিকল্প।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. শামসুর রহমান, বাচ্চাটিকে আমরা নিজের মতো করে দেখভাল করছি। আমি নিজেই তার পেছনে ১০ হাজার টাকা খরচ করেছি। তা ছাড়া হাসপাতালের স্টাফ, নার্সরাও করেছেন। সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন নবজাতকটিকে সুস্থ ও ভালো রাখতে। নবজাতকটির অবস্থা এখন ভালো রয়েছে। হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আদালতের নির্দেশনায় নবজাতককে তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আকরামুল ইসলাম/এনএ