নীলফামারী সদর উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়ায় বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে একটি চিতাবাঘের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধার্ত বাঘটি রাতের অন্ধাকারে ওই এলাকার আশিক রুদ্র পোল্ট্রি ফার্মে ঢোকার চেষ্টা করলে ঘটনা ঘটে। আরেকটি চিতাবাঘ লুকিয়ে আছে পার্শ্ববর্তী ভুট্টাখেতে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

তবে বাঘটি উদ্ধারে কাজ করছে রংপুর থেকে আসা বন বিভাগের একটি টিম। মৃত বাঘটি উদ্ধার করে ইতোমধ্যে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। জীবিত ক্ষুধার্ত বাঘটি আশপাশে থাকায় স্থানীয়দের সতর্ক করছে প্রশাসন।

জানা গেছে, দীর্ঘ ৯ বছর আগে মুরগির খামার করেন নীলফামারী সদরের চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়ার অলিয়ার রহমান। তার খামারে প্রায় ১০ হাজার মুরগি রয়েছে। গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে মুরগি খেকো নানান প্রাণীর উৎপাতে তিনি চরম বিপাকে পড়েছেন। এসব প্রাণীর উৎপাত ঠেকাতে খামারজুড়ে জি আই তারের মাধমে ব্যবহার করা হয় বৈদ্যুতিক ফাঁদ। আর সেই ফাঁদে প্রাণ গেছে ভারত থেকে আসা একটি চিতাবাঘের

আশিক রুদ্র পোল্ট্রি ফার্মের মালিক অলিয়ার রহমান বলেন, আগে এমন হয়নি, দেড় মাস ধরে আমার খামারের কোনো মুরগির পা থাকে না, কোনোটার গলা ছিঁড়ে যায়। আবার ১৫/২০ টা করে মুরগি মারা যায়। এভাবে আমার ৬০/৭০ হাজার টাকার মুরগি মারা গেছে। পরে আমরা শিয়াল সন্দেহে কারেন্টের  জি আই তার দিয়ে বেড়া দেই। আজকে এখানে দুইটা বাঘ আসছিল। একটা মারা গেছে, তখন আরেকটা বাঘ অনেক চিল্লাচিল্লি করে পাশের ভুট্টখেতে ঢুকে পড়ে।

কৃষক গোলাম মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই খামারের পাশের ভুট্টাখেতটি আমার। সকালে জানতে পারি অলিয়ার ভাইয়ের খামারের বিদ্যুতের ফাঁদে জড়িয়ে একটি বাঘ মারা গেছে। আর একটি বাঘ আমার ভুট্টাখেতে আছে। তখন থেকে এখানে আছি।

স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউর করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তো রাত-বিরাতে বাহিরে কাজে থাকি। না জানি কখন বাঘ আক্রমণ করে বসে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

বাঘ দেখতে আসা আরফিনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাঘ মরার কথা শুনে এসে দেখি বাঘটাকে রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ভয়ও কাজ করছে। আরেকটা বাঘ আছে, কখন আবার এলাকার মানুষের ওপর আক্রমণ করে।

চওরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বিঠু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে মসজিদে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক করছি। ক্ষুধার্ত বাঘটি যাতে কারও ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে জানতে পারি দুটি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে। একটি বাঘ বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা গেছে। আরেকটা পার্শ্ববর্তী ভুট্টাখেতে আছে। সেটিকে উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানকার মানুষজনকে অনুরোধ করব, অতিউৎসাহী না হয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানতে পারি যে, মৃত বাঘটি ক্ষুধার্ত ছিল। তারা ধারণা করছেন সঙ্গী বাঘটিও ক্ষুধার্ত। এজন্য সকলকে অনুরোধ করব- এ স্থান ত্যাগ করুন। 

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ রায় জানান, লোকবল সংকট থাকায় প্রাথমিকভাবে খাচা তৈরি করে বাঘটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাঘটিকে পর্যবেক্ষণে রাখার পর গতিপথ পরিবর্তন করে গন্তব্যে ফিরে না গেলে ঢাকা থেকে টিম নিয়ে এসে চেতনানাশক দিয়ে  অজ্ঞান করে ধরা হবে। আর ময়নাতদন্তের পর রির্পোট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শরিফুল ইসলাম/আরএআর