বগুড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল

বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর। 

তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ সদস্য রমজান আলী আহত হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় প্রায় ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। 

এছাড়া একই ঘটনায় মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুল ইসলাম থানায় মামলা করেছেন। মামলায় তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ তিন শতাধিক মানুষকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আলম মোহনও থানায় মামলা করেছেন। তিনি মামলায় মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুল ইসলামসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দুই শতাধিক লোককে আসামি করেছেন। 

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে বগুড়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটি। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আব্দুল মান্নান আকন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে বগুড়ার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বগুড়া থেকে নওগাঁ যেতে চারমাথা বাস টার্মিনালে এসে কোনো গাড়ি না ছাড়ায় বিপাকে পড়েছেন কলেজছাত্র সবুজ। ইনকোর্স পরীক্ষা দিতে গতকাল বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে আসেন তিনি। আজ মেসে থেকে বাড়ি যাবেন কিন্তু বাস না ছাড়ায় কীভাবে বাড়ি যাবেন তার উপায় পাচ্ছেন না।
এ রকম রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, গাইবান্ধাগামী যাত্রীরা ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছেন।  

জানা গেছে, বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইতোমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম নির্বাচনের  বিরোধিতা করে মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও মালামাল তার হেফাজতে চারমাথা বাস টার্মিনাল এলাকায় রাখেন।

মঙ্গলবার সকাল থেকে মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে চারমাথায় এলাকায় গিয়ে আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখলের ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এ খবর পেয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুলের লোকজন চারমাথা এলাকায় সমবেত হয়। তারা যে কোনো মূল্যে মোহন গ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য মাইকে ঘোষণা দেন এবং পরিবহন শ্রমিকদের প্রত্যেককে হাতে লাঠি নিয়ে অবস্থান নিতে বলেন।

খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ ও সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ চার মাথায় অবস্থান নেয়। পুলিশ আমিনুলকে সমঝোতায় প্রস্তাব দিলে আমিনুল পুলিশকে জানিয়ে দেন তারা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে অপর পক্ষকে প্রতিহত করবেন।

আমিনুল গ্রুপের লোকজন পুলিশের সামনেই লাঠি নিয়ে মিছিল শুরু করেন। এ সময় মোহন গ্রুপের দেড় দুই হাজার নেতাকর্মী সান্তাহার সড়ক দিয়ে এলজিইডির সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশ মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে থাকাকালে মোহন গ্রুপের দেড় দুই হাজার লোকজন লাঠিশোটা নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আমিনুল গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে। ধাওয়ায় তারা পালিয়ে গেলে মোহন গ্রুপের লোকজন টার্মিনাল এলাকা দখলে নিয়ে শুরু করে ব্যাপক ভাঙচুর। তারা এলোপাতাড়ি যানবাহন ভাঙচুর ছাড়াও আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও তার ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় আধাঘণ্টা চলে একতরফা তাণ্ডব। এ সময় ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে জিটিভির ক্যামেরাপার্সন রাজু আহম্মেদকে বেধড়ক মারধর করা হয়।

তাছাড়াও পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার কনস্টেবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে। পুলিশ রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে মোহন গ্রুপের লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় পুলিশ ৯ জনকে আটক করে। সংঘর্ষের কারণে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। 

সাখাওয়াত হোসেন জনি/আরএআর