মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে রাজশাহীর আমগাছগুলো। কোথাও কোথাও বাঁধতে শুরু করেছে গুটি। বাগানজুড়ে এখন মৌমাছিদের গুঞ্জরন। মুকুলের ম ম গন্ধে চারপাশ বিমোহিত।

কৃষি দপ্তর বলছে, এবার শীতের কুয়াশা পায়নি রাজশাহীর আমের মুকুল। আবহাওয়া রয়েছে অনুকূলে। মুকুল পরিমাণে কম হলেও গুটি হচ্ছে প্রচুর। আর আম পাকবে পবিত্র রমজানের পরে। তা ছাড়া কমে এসেছে করোনার প্রকোপ। ফলে বাজারে চাহিদা থাকবে তুলনামূলক বেশি। সব মিলিয়ে এবার আমে আশা দেখছেন চাষি।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলা নিয়ে রাজশাহী কৃষি অঞ্চল। গত ২০২০-২১ মৌসুমে এই চার জেলাজুড়ে আমবাগান ছিল ৮৪ হাজার ৩৮৮ হেক্টর। তা থেকে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৬১৪ টন আম। চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে মানবাগান রয়েছে একই পরিমাণ। ফলে গত বছরের উৎপাদনই এবারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরছে আঞ্চলিক কৃষি দপ্তর।

সূত্র জানাচ্ছে, রাজশাহী জেলায় আম-বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর। গত মৌসুমে জেলায় ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮ টন আম উৎপাদন হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম ফলেছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮ টন। এই জেলায় আমবাগান রয়েছে ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর।

এ ছাড়া নওগাঁ জেলায় ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর বাগান থেকে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ টন এবং নাটোরে ৫ হাজার ৮৫৭ হেক্টর বাগান থেকে ৮২ হাজার ৩৯৩ টন আম উৎপাদিত হয়েছে।

এর আগে ২০১৯-২০ মৌসুমে পুরো অঞ্চলে আমবাগান ছিল ৮১ হাজার ১৫ হেক্টর। ওই মৌসুমে আম উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৬৯৮ টন। পরের বছর আমবাগান বেড়েছে ১ হাজার ৩৭৮ হেক্টর। আর উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯১৬ হেক্টর।

রাজশাহীর চারঘাটের আমচাষি মজিদুল হক জানিয়েছেন, এখন সব গাছেই মুকুল। কিছু গাছে সরিষা দানার মতো হয়ে উঠেছে। এখন সেভাবে বাগান পরিচর্যা নেই। আম গুটি হতে শুরু করলেই পুরোদমে পরিচর্যা শুরু হবে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ভালো ফলনের আশা করা যাচ্ছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে আমের জন্য আবহাওয়া বেশ অনুকূলে রয়েছে। অন্যান্যবার কুয়াশায় মুকুলের কিছুটা ক্ষতি হলেও এবার সেটি নেই। আবার গত বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাটি পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। আবার অনেক কৃষক আমবাগানে সাথি ফসল চাষ করেছেন। এতে গাছ পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়েছে। এসব কারণে এবার মুকুলও বেশি দেখা যাচ্ছে। যা থেকে বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।

এই গবেষক আরও বলেন, গত কয়েক মৌসুমে রোজায় আম পাকছে। ফলে ক্রেতা-সংকট থাকছে। কিন্তু এবার আম পাকবে রোজার পর। তা ছাড়া করোনা সংকটও প্রায় কেটে গেছে। ফলে সব মিলিয়ে এবার আমে চাষিরা লাভের আশা করতেই পারেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহীতে ভালো আম উৎপাদনের ঐতিহ্য রয়েছে। এ বছর চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার হেক্টরের বেশি জায়গায় আমবাগান রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এই বছর মুকুলের পরিমাণ কম হলেও আমের গুটির সংখ্যা সন্তোষজনক। এই অর্থে আমরা মনে করি, আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে এবার আমের ফলন বাড়বে।
 
পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য হিসেবে আম উৎপাদনে আমরা চাষিদের সচেতন করে যাচ্ছি। এ ছাড়া বাঙালি বা ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণ যেসব দেশে থাকেন, সেসব দেশে আম রপ্তানি হয়ে থাকে। এর বাইরে উন্নত দেশগুলোতে আম রপ্তানির বিষয়ে সরকারও উদ্যোগী।

এনএ