মাসখানেক আগে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের লিফট হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এর কয়েকদিন পর লিফট ঠিক করতে টেকনিশিয়ান আসলেও তা আর ঠিক করা হয়নি। লিফট বন্ধ হওয়ার কয়েকদিন পর নতুন করে ভবনের নবম ও দশম তলার নির্মাণকাজ শুরু হয়। ফলে নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লিফট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

হাসপাতাল ও গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দশ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও দুই থেকে আড়াই মাস। এরপরই চালু করা হবে হাসপাতাল ভবনের লিফট। লিফট বন্ধের পর থেকেই চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। গাইনি, সার্জারি, অর্থোপেডিকসের রোগীদের সীমাহীন কষ্ট করতে হচ্ছে। লিফট চালু না থাকায় সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। 

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের দাবি, দ্রুত কাজ করে লিফট চালু করা হোক। তবে হাসপাতাল ও গণপূর্ত বিভাগ বলছে, ওপরে ভবন নির্মাণকাজ চলমান অবস্থায় লিফট সচল করা অসম্ভব। লিফট বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাইনি বিভাগকে ৭ম তলা থেকে ৩য় তলায় স্থানান্তর করেছে। এছাড়াও বর্তমানে চতুর্থ তলায় অপারেশন থিয়েটার, ষষ্ঠ তলায় সার্জারি ও অর্থোপেডিক ওয়ার্ড রয়েছে। 

গত সোমবার (২১ মার্চ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আজাইপুর এলাকার মো. সুলতান (৫৫) তার গর্ভবতী মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করান। জামাই ও নিজে মিলে মেয়েকে কোলে তুলে ভবনের তৃতীয় তলায় গাইনি ওয়ার্ডে উঠিয়েছেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় গর্ভবতী মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। তিনতলায় উঠাতে গিয়ে দেখি লিফট বন্ধ রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে কোলে করে মেয়েকে ওপরে উঠিয়েছি। সবার একই অবস্থা। জরুরিভাবে লিফট ঠিক করা দরকার।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় সার্জারি ওয়ার্ডের ৬১০ নম্বর কক্ষের ১৫ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামের মাসুদ রানা। তার শাশুড়ি সুবিয়ারা বেগম (৫০) জানান, জামাইয়ের অপারেশন হয়েছে, তাই এখানে এসেছি। গতকাল ছয় বার উঠতে-নামতে হয়েছে। বারবার ওষুধ-খাবার আনতে নিচে যেতে হয়। লিফট চালু থাকলে এমন কষ্ট হতো না। 

সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাখের আলী গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে জিয়াউর রহমান বলেন, আমার ছেলে ইমরান আলী (১০) ১০ দিন আগে সিঁড়ির ওপর থেকে পড়ে মাথায় জখম হয়েছে। পরে সেখানে ইনফেকশন হয়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীকে নিয়ে বারবার উঠতে নামতে হয়। এতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। লিফটটা দ্রুত ঠিক করা দরকার। 

১০ মাস আগে টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ করার সময় তিন তলা থেকে পড়ে পা ভেঙে যায় শিবগঞ্জের ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের বহরম গ্রামের বিশু মন্ডলের ছেলে ভিখারুল ইসলামের। এরপর থেকে বাম পায়ে কোনো শক্তি পান না তিনি। চলাফেরা করছেন দুই বগলে লাঠির সহযোগিতা নিয়ে। চাচাতো ভাই আবুল কালাম আজাদ ভর্তি আছেন অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের ৬১৪ নম্বর কক্ষে। তাকে দেখতে ভিখারুল ইসলাম ছুটে এসেছেন হাসপাতালে। 

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকদিন থেকে চাচাতো ভাই হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাই দেখতে এসেছি। বাম পায়ে কোনো শক্তি না পাওয়ায় লাঠির ওপর ভর দিয়ে হাঁটাচলা করি। ছয় তলায় উঠতে গিয়ে এক সিঁড়ি এক সিঁড়ি করে উঠতে হয়। লিফট চালু না থাকায় এক মিনিটের পথ প্রায় ২৫ মিনিট লেগেছে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোস্তারিন খাতুন জানান, গত এক-দেড় মাস থেকে লিফট বন্ধ রয়েছে। এতে রোগী, স্বজন ও হাসপাতালের স্টাফদের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নানা ভোগান্তি ও কষ্ট করতে হচ্ছে। তবে কি কারণে লিফট বন্ধ তা জানি না। 

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাসুদ পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোমধ্যে নবম তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, দশম তলার কাজ শেষ হওয়ার আগেই লিফটের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এতে আরও দুই-আড়াই মাস সময় লাগবে। জরুরি ভিক্তিতে ইতোমধ্যে গাইনি বিভাগকে সপ্তম তলা থেকে তৃতীয় তলায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে নির্মাণকাজ চলমান অবস্থায় লিফট চালু করার বিকল্প কোনো  ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহসীন ঢাকা পোস্টকে জানান, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে করোনালে জেলা হাসপাতালের নির্মাণাধীন নবম-দশম তলায় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা আইসিইউ নির্মাণ করা হবে। তাই জরুরি ভিক্তিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। উপরে নির্মাণকাজ চলমান অবস্থায় লিফট সচল করা অসম্ভব। তাই লিফট চালুর বিষয়ে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে। 

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালের নবম-দশম তলার কাজ চলছে। তাই লিফটের ওপরের ঢাকনা খোলা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দুই মাস সময় চেয়েছে। এছাড়াও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলার রোগীদেরকে অন্য জায়গায় চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে রোগীদের খুব বেশি কষ্ট না হয়। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর