পরের দুঃখে দুঃখী আমির নিজেই থাকেন ঝুপড়িতে
শারীরিক অক্ষমতার কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। ২০ বছর ধরে কলসি বাজিয়ে নিজের গানে সুর তুলে মানুষকে বিনোদন দেন আমির হোসেন। গান শুনে মানুষ যা দেয়, তা দিয়েই সংসার চালান কোনোরকমে।
আমির হোসেন (৩০) নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম জোটখালী গ্রামের উজির আলী হাজীর বাড়ির গোলাম মাওলার ছেলে।
বিজ্ঞাপন
নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত আমির হোসেন আশপাশের মানুষের দুরবস্থা নিয়ে বাঁধেন নতুন গান। এ ছাড়া নিজের ভিটেমাটি রক্ষায় সুর তোলেন নদীভাঙনের গান। স্থানীয়রা আমির হোসেনকে ডাকেন ভান্ডারী আমির হোসেন নামে।
১ ছেলে ও ৩ মেয়ে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছেন আমির হোসেন। ৬ বোন আর ২ ভাইয়ের মধ্যে আমির হোসেন সবার ছোট। বাবা গোলাম মাওলা মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে নিজের সব সম্বল শেষ করে এখন নিঃস্ব। অন্যের জায়গায় ঝুপড়ি ঘর তুলে কোনোরকম মাথা গুঁজিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আমির হোসেনের স্ত্রী মরিয়ম বিবি ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামী অসুস্থ। গান-বাদ্য করে যা আনে, তা দিয়ে সংসার চলে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বড় অসুবিধার মধ্যে আছি। থাকার ঘর নাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে আমির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন গরিবের সরকার। আমির হোসেন আরও বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান গাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা ঘর চাই। যদি ঘর পাই, তাহলে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাইতাম। ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকার ঠিকানা পেতাম।
বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য ম. জহির উদ্দিন চৌধুরী লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমির হোসেন হতদরিদ্র পরিবারের একটা ছেলে। তার বাবাও অনেক দরিদ্র। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সে কাজকর্ম করতে পারে না। তাই গানবাজনা করে জীবন যাপন করে। আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। সরকারি সুবিধা এলে তার জন্য বরাদ্দ করব।
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিন সুমন বলেন, আমিরের জন্য সবার এগিয়ে আসা উচিত। সে ভালো গান গায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে তার পরিবার চলে। সরকার যদি একটা ঘর দেয়, তাহলে ভালো হয়। সে খুব নিরীহ জীবন যাপন করে।
আমিরের বাবা গোলাম মাওলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার জায়গা-জমিন কিছু নাই, আমিরেরও কিছু নাই। সরকারি কিছু দিলে ছেলে সুখী হইল। ঘর নাই, দুয়ার নাই। বড় কষ্টে আছে।
বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। নির্বাচনের প্রচারণায় আমির সাথে ছিল। তাকে গান গাওয়ার জন্য টাকা দিতাম। সেই টাকা দিয়ে সে সংসার চালাত। সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটনের সঙ্গে কথা বলে যদি সরকারি ঘর পাই, তাহলে একটা ঘরের ব্যবস্থা করব।
এনএ