বরিশাল নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের দখল নিতে শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। রোববার (৩ এপ্রিল) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা সুলতান মাহমুদের নিজস্ব কার্যালয়ে এই হামলা চালায়। এ সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়। হামলায় কমপক্ষে ১৮ জন আহত হয়েছেন। 

হামলার শিকার শ্রমিক ও নেতারা দাবি করেছেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে ছাত্রলীগ এই হামলা চালিয়েছে। হামলার শিকার কেউ ভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যেতে পারছেন না বলে তারা নিজ ঘরেই বন্দী অবস্থায় রয়েছেন। 

তবে হামলায় অভিযুক্ত শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে- সুলতান মাহমুদের লোকজন তাদের ওপর পাল্টা হামলা চালিয়েছেন।

সর্বশেষ রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর লোকজন দখল করে রেখেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার দিকে চারজন ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে দুই শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে রূপাতলী বাস টার্মিনালে প্রবেশের পূর্বে মোবারক আলী মোল্লা মার্কেটের দোতলায় সুলতান মাহমুদের নিজস্ব কার্যালয়ে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও উপস্থিত সকলকে বেদম মারধর করা হয়।

অগ্রণী ব্যাংক রূপাতলী শাখার ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের কলাপসিবল গেটের পাশের কক্ষে মারামারি হয়েছে। অনেক লোক ওপরে উঠেছে আসছে দেখে আমরা গেট বন্ধ করে দিয়েছি। 

তবে ব্যাংকের স্টাফরা জানিয়েছেন, ব্যাংকের গেটের কাছে এসে আগেই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। পরে সুলতান মাহমুদের অফিসে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করে ও তাদের মারধর করে।

হামলার শিকার বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, আমি কার্যালয়ে প্রতিদিনের মতই  কাজ করছিলাম। তখন ছাত্রলীগ নেতা আতিকউল্লাহ মুনিম, সাজ্জাস সেরনিয়াবাত, রাজীব আহমেদ, রইজ আহম্মেদ মুন্নার নেতৃত্বে কমপক্ষে দুইশ লোক এসে হামলা চালিয়ে আমার অফিস ভাঙচুর করে ও আমাকেসহ উপস্থিত সকলকে মারধর করে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ দাঁড়ানো ছিল। পুলিশ চাইলে হামলা ঠেকাতে পারত। কিন্তু তারা নিরব ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। এজন্য হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে যেতে পারছি না। আমরা সকলেই বাসায় অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছি।

বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী সভাপতি মানিক বলেন, সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নামধারী সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বাস টার্মিনালে শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি একটি বৈধ কমিটি। সেই কমিটি উপেক্ষা করে তিনি আরেকটি অবৈধ কমিটি দিয়েছেন। সেই কমিটি সাধারণ শ্রমিকরা মেনে নেয়নি। এজন্য ছাত্রলীগ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে বাসস্ট্যান্ড দখল নিতে চান। 

মানিক আরো বলেন, শনিবার দুপুরে এবং সন্ধ্যায় মেয়রের অবৈধ কমিটির লোকজন আমাদের ৩ জনকে মারধর করেছে। আর আজকে তারা কমপক্ষে ১৫ জনকে মারধর করে মারাত্মক আহত করেছেন।  

হামলায় আহত শামীম বলেন, মারধরের পর ছাত্রলীগ নেতারা বলে গেছেন- মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য গেলে সেখানে আমাদের মেরে ফেলা হবে। এজন্য আমরা কেউ হাসপাতালে যেতে পারছি না। সকলেই বাসায় বিনা চিকিৎসায় পড়ে রয়েছি। হামলাকারীরা আমার ওপর হাতুড়ি দিয়ে হামলা চালায়। এছাড়া তাদের কাছে অস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা ছিল।

হামলায় আহতদের মধ্যে সুলতান মাহমুদ, মানিক, শামীম, নাসির উদ্দিন, মিজানুর রহমান, রিজন, বিপ্লব, শাওন, সোহাগ, ফারুকের নাম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শনিবার মারধর করা হয় বাসস্ট্যান্ডের লাইনম্যান সেলিম ও লালুকে। এই দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তবে হামলায় অভিযুক্ত বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, আমরা হামলার সাথে জড়িত নই। বরং সুলতান মাহমুদের লোকজন আমাদের অফিস র্ক্লাক দিপু ও কলম্যান কালামকে মারধর করেছে টার্মিনালে প্রবেশ করে।

সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বাবু বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়েছিলাম। স্ট্যান্ডের বাইরে কী হয়েছে তা আমরা জানি না। বরং সুলতান মাহমুদের লোকজন এসে আমাদের দুইজন শ্রমিককে মারধর করেছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এনামুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, রূপাতলীতে একটি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে হামলাকারীদের কিছু নাম পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। আমি জেনেছি হামলাটি খুব অল্প সময়ে হয়েছে। চারপাশে পুলিশ ছিল বিধায় দ্রুত সময়ে তারা চলে এসেছে, এজন্য কোনো ক্ষতি হয়নি। সম্পত্তির ক্ষতি হলেও মানুষের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ হামলার সময়ে নিরব ছিল বিষয়টি তেমন নয়। হামলার সময়ে পুলিশ আসতে যতটুকু সময় নিয়েছে। এজন্য বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিল। তবে পুলিশ নিরব ছিল তা ঠিক না। যারা হামলা করেছে তারা সঠিক কাজ করেনি। এটি নিঃসন্দেহে একটি অপরাধ। আমরা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত,  রূপাতলী বাস্ট্যান্ড দখলে নিতে দীর্ঘদিন ধরেই বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। ইতোপূর্বে শ্রমিক ইউনিয়ন দখল নিয়ে দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে প্রতিমন্ত্রীপন্থিরা মেয়র পন্থিদের কমিটি অবৈধ এবং নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা করেছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই