পুঁতিশিল্পী কাউছার একটি সরকারি ঘর চান
হাছন রাজার প্রতিকৃতি হাতে কাউছার
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কাউছার আলম। পেশায় একজন পুঁতিশিল্পী। নিজের টাকা খরচ করে পুঁতি দিয়ে তৈরি করছেন খ্যাতিমান ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি। বিএ পাস করা কাউছার এই শিল্পকর্ম দিয়ে নিজেকে নিয়ে যেতে চান অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু জমিজমা ও ঘর হারানো কাউছারের পরিবার এখন কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
এর আগে কাউছার তৈরি করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, যা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম, দুর্বিন শাহ, রাধারমণ দত্ত ও হাসন রাজার প্রতিকৃতি ইতোমধ্যে জেলা ঐতিহ্য জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।
বিজ্ঞাপন
২৮ বছর বয়সী কাউছার আলম তার শৈল্পিক হাত দিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি তৈরির পাশাপাশি টিস্যু বক্স, ফুলদানি, ব্যাগ, মাফলারও বানান। এগুলো বিক্রি করে মাসে ছয় থেকে সাত হাজার আয় করেন। তিন সদস্যের অভাবেব সংসারে তিনিই ব্যয় নির্বাহ করেন।
ইছাক মিয়া ও হালেমা খাতুনের চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে তৃতীয় সন্তান কাউছার আলম। তিনি বিশ্বম্ভরপুর সরকারি দিগেন্দ্র বর্মণ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তিনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের সিরাজপুর বাগগাঁও গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বাস করেন।
বিজ্ঞাপন
অভাবের সংসারে কাউছারের বসবাস। নেই কোনো থাকার ভালো ঘরও। কারণ, নদীভাঙনে জমিজমাসহ হারিয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমি ও গৃহহীন হিসেবে আবেদন করেন। কিন্তু ভাগ্যে জোটেনি একটি ঘরও।
নিজেদের থাকার জন্য কোনো ঘর নেই উল্লেখ করে কাউছার বলেন, যাদুকাটা নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর মানুষের বাড়িতেই ঠাঁই হয়েছে আমাদের। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার কথা শোনার পর আমি আবেদন করি। কিন্তু ঘর আমার ভাগ্যে জোটেনি।
কাউছার আলম জানান, পাঁচ বছর ধরে পুঁতি দিয়ে আল্লাহর নামসহ বিভিন্ন নামফলক, ফুলদানি, টিস্যু বক্স, কলমদানি, ব্যাগসহ ৩০ রকমের পণ্য তৈরি ও বিক্রি করছেন তিনি। নারীদের জন্য ছোট একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রও রয়েছে তার। ২০১৮ সালে পুঁতি দিয়ে মানুষের পোর্ট্রেট করার চিন্তা করেন তিনি। প্রথমেই তিনি ভাবেন, তার স্বপ্নের পুরুষ, বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পোর্ট্রেট করবেন। যদিও প্রথম দেড় বছর কাজ করে কোনো সাফল্য আসেনি। কিন্তু তিনি হতাশ হননি, হাল ছাড়েননি।
তিন বছর ধরে পুঁতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন। মুজিব বর্ষ সামনে রেখে রাতদিন খেটেছেন এবং একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর পোর্ট্রেট তৈরির কাজে সফল হয়েছেন। গেল বছরের ১৬ মার্চ এটি নিয়ে তিনি গণভবনে যান। সেখানকার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে জানান, করোনার জন্য এখন আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয়। তারা তাকে পরামর্শ দেন তার এই শিল্পকর্ম ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের জাদুঘর কর্মকর্তাদের কাছে দিতে, যাতে করোনার পর সেখানে গেলে প্রধানমন্ত্রী সেটি দেখতে পারেন।
পুঁতিশিল্প নিয়ে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কী, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত মাসে আমার চারটি পোর্ট্রেট সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। আমি এই পুঁতিশিল্প নিয়ে এগোতে চাই। কাউছার জানান, তার বাবার এখন বয়স হয়ে গেছে। আগের মতো বারকিশ্রমিকের কাজ করতে পারেন না। তাই সবজি বিক্রি করেন। তিনিও পুঁতির শিল্পকর্ম বানিয়ে ও বিক্রি করে সামান্য যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসারে সহযোগিতা করেন তিনি। পাশাপাশি শহরের মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে অফিস সহায়কের চাকরি করছেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ বিসিকের উপব্যবস্থাপক এম এস এম আসিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁতিশিল্প ও হস্তশিল্পকে এগিয়ে ঢাকায় আমাদের বিসিক নকশা কেন্দ্র নামে একটি শাখা রয়েছে। যেখানে এই রকমের শিল্পীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এ ছাড়া তিনি যদি আর্থিক সহায়তা চান, সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি আমাদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, তাহলে আমরা তাকে কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করব। বিসিকের তহবিলে টাকা থাকলে সেখান থেকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছে এই কর্মকর্তা।
এনএ