সাভারের আশুলিয়ায় একটি সোয়েটার কারখানার ১১০ জন শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ ঘটনায় শ্রমিকদের ছবিসহ দেয়ালে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার হামিদুল্যাহ ম্যানশনে গিয়ে ফ্যাশনইট কোম্পানি লিমিটেড কারখানার দেয়ালে ছবিসহ শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির নোটিশ টাঙানো দেখা যায়।

শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে ওই কারখানায় প্রায় ১২০০ শ্রমিক কাজ করে আসছে। কারখানায় কাজের রেট (প্রাইস) কম দেয় কর্তৃপক্ষ। এ কারণে গত ৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করছিল শ্রমিকরা। এ ছাড়া জ্যাকার্ড সেকশনের শ্রমিকদের উৎপাদন (প্রডাকশন) বাড়িয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে জ্যাকার্ডের শ্রমিকরা লিংকিং সেকশনে এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে সব শ্রমিক মিলে কর্মবিরতি পালন শুরু করে। 

চাকরিচ্যুত শ্রমিক ওয়াশিম বলেন, আমাদের কাজ জ্যাকার্ডের শ্রমিকরা বন্ধ করে দেয়। পরে সব শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করে। আগামীকাল টার্মিনেশন বেনিফিট দেওয়ার কথা আছে। আমরা চাই না কোনো ঝামেলা হোক। আমরা আইনগত পাওনা বুঝিয়ে চাই।

অপর শ্রমিক মনির বলেন, গত ৪-৫ দিন ধরে ওই কারখানায় কর্মবিরতি পালন করছে শ্রমিকরা। গতকাল হঠাৎ শ্রমআইন-১৩ এর ক ধারায় কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরে আজ ১১০ জনের ছবিসহ চাকরিচ্যুতির নোটিশ দেয়ালে টাঙানো হয়। শ্রমিকদের ছবিসহ কারখানায় চাকরিচ্যুতের নোটিশ দেওয়া অন্যায়।

এ ছাড়া আমাদের কোনো বেতন কিংবা আইনগত পাওনাদি পরিশোধ করা হয়নি। সামনে ঈদ, আমাদের পুরো পরিবারের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেল।

এ ব্যাপারে ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্সে সাভার আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. ইমন শিকদার বলেন, আসলে কারখানাটিতে গত ৪-৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা কাজ বন্ধ না করে লিখিত আকারে তাদের দাবি কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করতে পারত।

কিন্তু তারা তা না করে কর্মবিরতি পালন করেছে। এটাও যেমন উচিৎ হয়নি তেমনি ঈদের আগে ১১০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করাটাও অন্যায়। আমি শ্রমিকদের পূণর্বহাল কিংবা আইনগত পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানাই।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, কারখানার ভালো কিংবা খারাপ শ্রমিক হলেও দেয়ালে তার ছবি টাঙানো আইনসম্মত নয়। আমি মনে করি শ্রমিকদেরও উচিত কোনো স্টাফ কেমন তার ছবিসহ দেয়ালে টাঙানো। দেয়ালে ছবি টাঙিয়ে চাকুরিচ্যুত করা রীতিমত অন্যায়।

এ ব্যাপারে কারখানার অ্যাডমিন ম্যানেজার আব্দুল মালেক বলেন, আপনি আইনটা ভালোভাবে দেখেন ২৬ ধারা অনুযায়ী যদি শ্রমিকরা অবৈধভাবে ধর্মঘট করে, তাহলে তার পাওনা দিয়ে বের করতে পারে। 

শ্রমিকদের ছবিসহ দেয়ালে তালিকা দেওয়া যুক্তিসংগত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি যদি যুক্তিসংগত মনে না করেন তাহলে আমার করার কিছু নাই। বাংলাদেশের প্রতেকটা ফ্যাক্টরি এভাবেই চলে। আমি কারখানা থেকে বের হয়ে এসেছি, আপনি অফিস টাইমে যোগাযোগ করবেন। 

মাহিদুল মাহিদ/আরআই