মুন্সিগঞ্জের চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে গুলিবিনিময় ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অত্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। 

শনিবার ভোর ৬টার দিকে সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের নোয়াদ্দা ও চর বেশনাল গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারী ও মহসিনা হক কল্পনার দলীয় সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।‌ ঘটনার পর থেকে ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক পক্ষের আহতরা হলেন, মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ (২২), রানা ব্যাপারী (১৮), মো. শরিফ খান (২৫), সারোয়ার হোসেন (২৫), রিফাত হোসেন (৯) ও হনুফা বেগম (৬০)। রিপন হোসেন পাটোয়ারীপক্ষের আহতরা হলেন, তাসলিমা বেগম (৩৬), লালন মিয়া ও মানিক শিকদার। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালে থেকে সদর উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারী ও আ.লীগ নেত্রী মহসিনার বিরোধ চলে আসছে। গত কয়েক বছরে পক্ষ দুটির মধ্যে শতাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। 

২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনে রিপন পাটোয়ারী বিজয়ী হলে মহসিনা হকের লোকজনকে এলাকা ছাড়া করে দেয়। সম্প্রতি মহসিনা হকের লোকজন এলাকায় ফিরে এলে আবার দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় দুই পক্ষের অনেক মানুষ আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মাদরাসাছাত্র রিফাতের মা বলেন, আমার ছেলেকে বাড়িতে রেখে মরিচ তোলার জন্য জমিতে গিয়েছিলাম। ওই সময় ছেলে বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। হঠাৎ রিপন পাটোয়ারীর লোকজন এসে এলোপাতাড়িভাবে করে। এতে আমার ছেলের হাতে ও পায়ে গুলি লাগে। 

আহত হনুফা বেগম বলেন, সকালে রিপন পাটোয়ারীর ২৫- ৩০ জন লোক আমাদের বাড়িতে আসে। এসময় আমি বলি রোজার দিন তোমরা কেউ ঝগড়া কইরো না। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ওরা আমার পায়ে ছড়া গুলি করে। 

নোয়াদ্দা গ্রামের আহত তাসলিমা বেগম বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে কল্পনার লোকজন আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা আমার বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করে। আমার ঘরে টিভি ও ফ্রিজ ভেঙে ফেলে তারা। আমি বাধা দিলে আমার হাত পিটিয়ে ভেঙে ফেলে। 

এ বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক বলেন, গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকেই আমার লোকজন গ্রামছাড়া ছিল। কিছুদিন আগে তাদেরকে সভার মাধ্যমে গ্রামে আনা হয়। তবে তার একদিন পরে আবারও আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করে পিটিয়ে গ্রামছাড়া করে রিপনের লোকজন। যে কয়েকজন ছিল আজ ভোরে বেছে বেছে তাদের ওপর হামলা করা হয়। তারা আমাদের বেশ কয়েকজনকে গুলিবিদ্ধ করে আহত করেছে। প্রশাসনকে বলে আমরা কোনো সুরাহা পাচ্ছি না। 

নোয়াদ্দা গ্রামের বাবু গাজী বলেন, আমরা মহসিনা হকের নির্বাচন করেছিলাম। এটাই ছিল আমাদের দোষ। এ কারণে আজকে সকালে রিপন পাটোয়ারীর আমঘাটা ও কংশপুরা গ্রামের লোকজন এসে আমাদের গ্রামে হামলা করে। বাড়ি-ঘরে লুটপাট চালায়। গরু, বাছুর ও ছাগল নিয়ে যায়। ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। গুলি করে আমাদের ২০ থেকে ২৫ জনকে আহত করে। আহতরা পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। 

এ ঘটনায় মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। 

তিনি বলেন, গত নির্বাচনের পর থেকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহসিনা হকের অনেক লোকজন গ্রামের বাইরে ছিলেন। কয়েকদিন আগে একটি সভার মাধ্যমে তার লোকজনকে গ্রামে আনা হয়। গ্রামে আসার পর থেকেই তারা আবার ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। গত ২৮ মার্চ থেকে আজকে পর্যন্ত পরপর তিনটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলোতে আমার অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে। 

এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যারা গ্রামকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ব.ম শামীম/এমএএস