অবশেষে দিনাজপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের অলিগলিতে খুঁজে বেড়ানো দুই মেয়ের সন্ধান পেয়েছেন বাবা ইদ্রিস আলী। শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাতে ফতুল্লা থানা পুলিশ ইদ্রিস আলীর সঙ্গে তার দুই মেয়ের সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়।

জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল ইসলাম বলেন, জিডির তদন্তভার পাওয়ার পর থেকেই আমরা কাজ শুরু করি। কিন্তু জিডিতে উল্লেখ থাকা শাশুড়ি আকলিমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি একেক সময় একেক ঠিকানার কথা বলছিলেন। এক পর্যায়ে আমরা তাকে বলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আপনার জন্য পুরস্কার এসেছে।

তিনি বলেন, এ পুরস্কারের কথা শুনে আকলিমা আমাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ঠিকানা দেন। এরপর আমারা সেখানে গিয়ে দুই মেয়েসহ শাশুড়ি আকলিমাকে উদ্ধার করি।

দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, অনেক কষ্টের পর আমার দুই মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি। দুই মেয়েকে ছাড়া আমি ভালো ছিলাম না। আল্লাহর রহমতে দুই মেয়েকে কাছে পেয়েছি। এজন্য সাংবাদিক ও পুলিশ প্রশাসনের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাদের জন্যই আমি আমার দুই মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি।

এর আগে ইদ্রিস আলী বলেছিলেন, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল আমার। কৃষিকাজের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে ঢাকায় এসে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। আশা ছিল মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে ভালো জায়গায় বিয়ে দেবো। কিন্তু স্ত্রীর প্ররোচনায় দালালের খপ্পরে পড়ে সব নষ্ট হয়ে যায়।

তিনি জানান, একদিন বাড়ি ফিরে দেখেন তার দুই মেয়ে ইতি (৯) এবং মীমকে (৫) নিয়ে স্ত্রী শাহনাজ বেগম বাড়ি ছেড়েছেন। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হলেও তাদের কোনো ঠিকানা জানার সুযোগ হয়নি। মেয়েরা তার কাছে যেতে চাইলেও সে সুযোগ দেওয়া হয়নি।

সন্তানদের খোঁজে দিনাজপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে রিকশা চালানো শুরু করেছিলেন ইদ্রিস আলী। রিকশা চালাতে চালাতে এখানকার অলিগলিতে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন সন্তানদের। কিন্তু কোথাও তাদের সন্ধান মিলছিল না। মেয়েদের ফিরে পাওয়ার আশায় নাওয়া খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন ইদ্রিস আলী।

এই ঘটনায় গত ১০ এপ্রিল (রোববার) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন ইদ্রিস। পুলিশ সেই জিডি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। অবশেষে তার দুই সন্তানের সন্ধান পায় পুলিশ।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুজ্জামান (ওসি) বলেন, দুই মেয়েকে পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ইদ্রিস আলী ও তার শ্বশুরের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে আদালতের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) নাজমুল হাসান বলেন, ইদ্রিস আলী দিনাজপুর থেকে তার দুই মেয়ের খোঁজে নারায়ণগঞ্জে এসে ফতুল্লা থানার দ্বারস্থ হন। আমরা তাকে প্রাথমিক পর্যায়ে জিডি করতে বলি। সেই সাথে গণমাধ্যমে তার কান্নার ভিডিও দেখি। সেখানে তিনি বলছিলেন, তার শাশুড়ি দুই মেয়েকে আটকে রেখেছেন। আমরা সেই সূত্র ধরে কাজ শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, সবশেষ শনিবার বিকেলে ইদ্রিস আলীর দুই মেয়েসহ তার শাশুড়ির সন্ধান পাই। সেই সাথে ইদ্রিস আলীর সাথে তার দুই মেয়ের সাক্ষাৎ করিয়েছি। আমরা এখন একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালত পেশ করব। আদালতের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজু আহমেদ/এসকেডি