সুনামগঞ্জে এতদিন ফসল রক্ষা বাঁধে কৃষকরা অবস্থান করলেও এখন সবাই হাওরে ধান কাটতে ব্যস্ত। পরিবারের নারী-পুরুষসহ সবাই মিলে ধান কাটা, মাড়াই ও ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় আবাদকৃত ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান কাটতে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক হাওরে কাজ করছেন। এছাড়াও বাইরের জেলা থেকে আরও ২১ হাজার শ্রমিক এসেছেন ধান কাটতে।

পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসন থেকে বছরের একমাত্র ফসল রক্ষা করতে গত ১৫ দিন ধরে সুনামগঞ্জের মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে হঠাৎ করেই নদীর পানি বেড়ে ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এসব বাঁধ মেরামত ও পুর্নসংস্কার কাজে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয় হাজারও মানুষ।
 
একদিকে, ফাটল ও ধসে নড়বড়ে বাঁধ। তার ওপর দ্বিতীয় দফায় উজানে ভারী বৃষ্টিপাত। এ যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ এর মতো আঘাত হানল। টুইটম্বুর নদীর পানি উপচে গতকাল রোববার সকালে টাঙ্গুয়ার হাওরের স্থায়ী বাঁধ উপচে বর্ধিত গুরমা হাওরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।

স্থানীয়রা ধারণা করেছিলেন পানি কিছুটা কমলে হাওরের ফসল রক্ষা পাবে। তবে তা আর হয়নি। বিকেলে বাঘমারার ২৭ নম্বর পিআইসির বাঁধ ভেঙে একই হাওরে পানি প্রবেশ করে। এতে ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে শুরু করে বর্ধিত গুরমার পুরো হাওরটি।

রোববার সন্ধ্যার দিকে দিরাইয়ের হুরামন্দিরা হাওরের ৪২ নম্বর পিআইসি বাঁধের সাতবিলা রেগুলেটর সংলগ্ন অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৩০০ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। চারদিকে একের পর এক বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবরে দিশেহারা কৃষক। তাই এখন ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

বিশ্বম্ভরপুরের কৃষক তোতা মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। এতদিন ফাটল ধরা বাঁধ মেরামত করে কাজ করেছি। এখন অবস্থা খারাপ। নদীর পানি বাড়ছে। তাই সবাই মিলে হাওরে ধান কাটতেছি। 

একই এলাকার কৃষক মো. বাবুল মিয়া বললেন, এতদিন হাওরের বাঁধে কাজ করেছি। গতকাল থেকে হাওরে চলে এসেছি। আধাপাকা যাইহোক কেটে ফেলতে হবে। আমরা ২০ জনে ধান কাটছি। 

দিরাইয়ের কৃষক মো. নুর হোসেন বললেন, চারদিক দিয়ে পানি ঢুকছে হাওরে। মানুষে দিনরাত কাজ করেও বাঁধ রক্ষা করতে পারছে না। হাওরে ধান কাটব নাকি ফসল রক্ষা বাঁধে কাজ করব? নদীর অবস্থা ভালো না। ক্ষণে ক্ষণে দিনের অবস্থা পরিবর্তন হয়। সবাই হাওরে ধান কাটতে চলে এসেছি। এখন কিছু করার নেই। যাই হয়, কেটে ফেলতে হবে। 

বিশ্বম্ভরপুরের বাসিন্দা আব্দুল কাদির বললেন, এতদিন বাঁধে কাজ করেছি। এখন দল বেঁধে হাওরে অন্যের জমির ধান কেটে দিতে এসেছি। আবহাওয়ার অবস্থা ভালো নয়। তাই সারাদিন ধান কেটে রাতে গেরস্তের বাড়িতে থাকি। কাঁচাপাকা যাইহোক কাটতেছি। প্রতিদিন রাতে বৃষ্টিসহ ঝড় হয়। সবাই এখন ধান তাড়াতাড়ি কাটতে চায়। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুনামগঞ্জের ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত (সোমবার) ৬২ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। আমরা স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ দিচ্ছি ৮০ ভাগ পেকে গেছে এমন ধান কাটা শুরু করার জন্য। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক হাওরে কাজ করছেন। এছাড়াও বাইরের জেলা থেকে আরও ২১ হাজার শ্রমিক ধান কাটছেন।

সাইদুর রহমান আসাদ/এমএএস