ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করেছেন রাজবাড়ীর সেমাই কারিগর ও শ্রমিকরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে সেমাই তৈরির কাজ। এসব সেমাই জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে পাশের জেলাগুলোতেও। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত সেমাই খুচরা ৭০-৭৫ টাকা এবং খোলা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ীর বিসিক শিল্প নগরী এলাকার দ্বীন ফুড প্রোডাক্ট, শাওন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ও কাজী ফুড প্রোডাক্ট নামে তিনটি কারখানায় তৈরি হচ্ছে সেমাই। সবগুলো কারখানা মিলে প্রায় ৫০ জন কারিগর ও শ্রমিক কাজ করছে।

কারিগরদের মধ্যে কেউ সেমাইয়ের ময়দা প্রস্তুত করছে, কেউ মেশিনে সেমাই তৈরি করছে, কেউ আবার কাঁচা সেমাই রোদে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছে, আবার কেউ কেউ রোদে শুকানো সেমাই চুলাতে ভাজার কাজ করছে। 

দ্বীন ফুড প্রোডাক্টের (ডায়মন্ড সেমাই) সেমাই তৈরির প্রধান কারিগর মমিন শেখ বলেন, গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর কাজের চাপ বেশি। আমরা দম ফেলারও সময় পাচ্ছি না। কোনো রকম রং ও কেমিকেল ছাড়া স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমরা সেমাই তৈরি করছি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের কারখানার উৎপাদিত সেমাই জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও পাঠানো হয়।

সেমাই কারখানার শ্রমিক আছিয়া খাতুন বলেন, সারা বছর সেমাই কারখানায় কাজ করলেও ঈদের সময় কাজের চাপ পড়ে দ্বিগুণ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে সেমাই তৈরির কাজ। তবে আমাদের কাজের তুলনায় মজুরি খুবই কম।

দ্বীন ফুড প্রোডাক্টের মালিক কামিরুল হোসেন বলেন, রাজবাড়ীর বিসিক শিল্প নগরীতে জমি লিজ নিয়ে কারখানা নির্মাণ করে প্রায় ২০ বছর ধরে সেমাই তৈরি করে আসছি। করোনার কারণে গত দুই বছর কারখানাটি ঠিকমতো চালাতে পারিনি, শ্রমিকদেরও বেতন দিতে পারিনি। আল্লাহর রহমতে এবার ঈদে আবারও কারখানা চালু করেছি। ভালো সাড়াও পাচ্ছি। আমরা রং ও কেমিকেল ছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেমাই তৈরি করি। এজন্য বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি।

সেমাই কারখানার কয়েকজন মালিক জানান, বর্তমানে সেমাই তৈরির কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, কারিগর ও শ্রমিকদের মজুরি, জমির ভাড়া ও সরকারের ভ্যাটসহ সব খরচ মিটিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এ ধরনের কুটির শিল্প বাঁচাতে সরকারের কাছে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, ‘বিসিক শিল্প নগরীতে তিনটি সেমাই কারখানা আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। তারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবেই সেমাই তৈরি করছে। এখানকার সেমাই জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ রাজবাড়ী জেলার নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেমাই কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সেমাই তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও কেউ নির্দেশনা না মানলে তার বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মীর সামসুজ্জামান/এসপি