ঘরের চতুর্দিকে রক্ত ছেটানো। রক্তে ভিজে আছে চেয়ার। মৃত দুই শিশুর পাশেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাদের মা। আটকানো ছিল ঘরের দরজা। মৃত দুই শিশুর বাবা ও নানি ঘরের টিন খুলে এমন চিত্র দেখতে পান। 

রোববার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের ১ নম্বর পুনর্বাসন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত সাজিম (৬) ও সানি (৪ মাস) ওই গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে। গুরুতর আহত ইউসুফের স্ত্রী সাহিদা বেগমকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ইউসুফ তার স্ত্রী সাহিদাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি নিকরাইল ইউনিয়নের পুনর্বাসন এলাকায় থাকেন। তিনি মাছ ধরার কাজ করেন। সকালে মাছ ধরার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। তবে সম্প্রতি শ্বশুরবাড়ি থাকা নিয়ে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়েছিল। স্থানীয়রা দুই দিন আগে দুই পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করে দেন। শিশুদের শরীরে কোনো আঘাত নেই। ফ্যান পড়লে পাখাসহ বডি পড়ে যাবে। কিন্তু মাত্র ফ্যানের দুটি পাখা খুলে পড়ে আছে। তাতে পাখাতে কোনো রক্তের দাগ নেই। দুই শিশুর মৃত্যু সন্দেহজনক।

আহত সাহিদার মা সূর্যবানু বলেন, দুপুরের দিকে মেয়েকে ডেকেছি বহুবার। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। নাতিগুলোর কোনো শব্দ অথবা ঘরে ফ্যান ঘুরার শব্দ পায়নি। পরে অন্যের মোবাইল থেকে জামাতা ইউসুফকে ফোন করে ঘটনা বলি। পরে সে বাড়িতে এসে দরজা বন্ধ পেয়ে টিন খুলে ঘরে প্রবেশ করে। দেখি দুই নাতি বিছানায় পড়ে আছে, মেয়ে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। পরে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। প্রথমে তাদের পড়ে থাকতে দেখে মনে হয়েছে সবাই মারা গেছে। এ সময় মেয়ে নড়াচড়া করে উঠলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ইউসুফ আলী বলেন, সকালে মাছ ধরার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। তখন তারা ঘরেই ছিল। পরে শাশুড়ি ফোন করে বলেন সাহিদা দরজা খুলছে না। পরে বাড়িতে গিয়ে ঘরের টিন কেটে ভেতরে দেখি আমার সবই শেষ। কীভাবে হলো, কে করল বুঝতে পারছি না। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘরের যে ফ্যান ছিল সেটা ঝুলন্ত অবস্থাতেই ছিল। ফ্যানের দুইটা পাখা পড়ে ছিল। তবে সেগুলোতে রক্তের কোনো দাগ ছিল না। বিভিন্ন সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে।

ভূঞাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও শিশুদের মা আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। 

তিনি আরও জানান, ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। শিশুদের মায়ের কাছ থেকেই মূল ঘটনা জানা যাবে। 

অভিজিৎ ঘোষ/এসপি/আরএআর