পাবনার কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে দুই পাড়ে আটকে পড়েছে তিন শতাধিক যানবাহন। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে দুটি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় পাবনার কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে উদ্বোধনের পর থেকে চারটি ফেরি বরাদ্দ থাকলেও পরে ফেরি বহরে আরও একটি যুক্ত হয়ে পাঁচটি ফেরি দিয়ে চলছিল এই নৌপথ। তিন মাস ধরে মাত্র তিনটি ফেরি দিয়ে চলছে এ রুট। কিন্তু মঙ্গলবার এ ঘটনায় ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে তিন শতাধিক যানবাহন।

পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য কাজিরহাট-আরিচা নৌরুট অন্যতম। মহাসড়কে তীব্র যানজটে ভোগান্তি কমাতে হাজারো মানুষ কাজিরহাট-আরিচা রুট বেছে নেয়। কিন্তু হঠাৎ দুটি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা।

মাহবুবুর রহমান জানান, তিন মাস ধরে এই নৌপথে কোনো যানজটের দেখা মেলেনি। হঠাৎ আজ সকালে তিনটি ফেরির মধ্যে দুটি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এ জন্য অনেকগুলো পণ্যবাহী ট্রাক ও মাইক্রোবাস আটকে রয়েছে। আজ থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। যার জন্য ফেরিঘাটে ঘরমুখী মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। মেরামতের জন্য আরিচাঘাটে পাঠানো হয়েছে। এত বড় রুটে ঈদের সময় মাত্র একটি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার সম্ভব নয়।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৭টার দিকে প্রথমে রানিক্ষেত ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর আরিচা ঘাটে সেটি মেরামত করার জন্য পাঠানো হয়। এরপর সকাল ৮টার দিকে কপোতি ফেরিতেও যান্ত্রিক ক্রটি দেখা দিলে সেটি মেরামতের জন্য আরিচা ঘাটে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ফেরি কদম চলাচল করছে।

সরেজমিনে কাজিরহাট ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফেরিতে উঠতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছে যানবাহনের চালক ও ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা। রোজার মধ্যে তীব্র গরমে অনেকে গাড়ির মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন পরিবহনচালকরা।

যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের সময় মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ, বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানজটের আশঙ্কায় ট্রাকসহ অনেক যানবাহন কাজিরহাট-আরিচা নৌপথে যাতায়াত বেচে নেয়। এতে নৌপথে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

মাসুদ রানা নামে একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, গত কয়েক মাস এখানে কোনো যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখিনি। হঠাৎ আজ সকাল থেকে যানজট দেখতেছি। রোজার সময় তীব্র গরমে অনেক নারী-শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে করতে ফেরি থেকে নামতে দেখেছি। এই ফেরি ঘাটি এখন অনেক জনপ্রিয় হলেও বড় বড় কোনো ফেরি নেই। ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তি কমাতে নতুন নতুন ফেরি যুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত সবুজ হোসেন বলেন, ঈদের প্রথম শিফটের ছুটি পেয়ে ভোরে ঢাকার গাবতলী থেকে রওনা দিয়ে আরিচা ঘাটে এসে দেখি ফেরি নেই। ছয় ঘণ্টা বসে থাকার পরে দুপুর ১২টার দিকে একটি ফেরির দেখা পেয়েছি।

কাজিরহাট ঘাটের ব্যবস্থাপক মাহাবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নানা সমস্যায় জর্জরিত এই ঘাট। প্রথমত ফেরিসংকট। তার ওপর যেসব ফেরি এখানে দেওয়া হয়েছে, সব পুরোনো ও ত্রুটিযুক্ত। প্রায়ই ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। গত তিন মাস পরিবহনগুলো অনায়াসে পারাপার হয়েছে। হঠাৎ এক দিনে দুটি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

তবে আশার বাণী শোনান মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ত্রুটিযুক্ত দুটি ফেরির মধ্যে আজ সন্ধ্যার দিকে একটি ফেরি মেরামত সম্পূর্ণ হতে পারে। বাকি ফেরিটা আগামীকালের মধ্যে মেরামত শেষে ঘাটে চলাচল করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করছি।

রাকিব হাসনাত/এনএ