৪ লাখ টাকার বরাদ্দে সীমানাপ্রাচীর হয়নি, গর্তে মাটির বদলে ছাই
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে দেওয়া হয় দুই লাখ টাকার বরাদ্দ। কথা ছিল ফুটবল একটি ফুটবল মাঠ ভরাট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করতে হবে।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরেও দেওয়া হয় দুই লাখ টাকার বরাদ্দ। তখন একই জায়গায় ফুটবল মাঠ ভরাট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কথা ছিল। মোট চার লাখ টাকার প্রকল্পের কাজও শেষ হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে শেষ হওয়া চার লাখ টাকার ফুটবল মাঠ ভরাট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দেখলে চোখ কপালে উঠবে যে করোরই।
দুটি প্রকল্পের কাজ অনেক আগে শেষ হলেও সেখানে গিয়ে একটিও ইট খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করার কথা থাকলেও মোট সীমানার প্রায় অর্ধেক ভরাট করা হয়েছে। তাও আবার মাটির বদলে অটোরাইস মিলের পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, প্রকল্প দুটি অনুমোদন দেওয়া হয় সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন আখতারের নামে। সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের ঘুঘুডিমা স্লুইসগেট ফুটবল মাঠ ভরাট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ বাবদ দুটি প্রকল্প মোট চার লাখ টাকা বরাদ্দ হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, গত দুই বছরে স্লুইসগেট ফুটবল মাঠের পশ্চিম প্রান্তে থাকা গর্তে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক্টর পরিত্যক্ত ছাই ফেলা হয়েছে। এমনকি সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিকদের দিয়ে মাটি বিছিয়ে ছাই দেওয়া হয়েছে। যাতে ওপর থেকে ছাই দেখা না যায়। এমনভাবে ছাইয়ের ওপর মাটি বিছানো হয়েছে, দেখলে মনে হবে মাটি দিয়ে ভরা করা হয়েছে।
স্থানীয়দের এই অভিযোগের সত্যতা মেলাতে একজনকে কোদাল দিয়ে মাটিতে কোপ মারতে অনুরোধ করেন এই প্রতিবেদক। তখন মাটির চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি নিচ থেকেও বেরিয়ে আসে ছাই।
স্থানীয় গৃহিণী রোকসানা বেগম (ছদ্মনাম) ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্লুইসগেট ফুটবল মাঠের পশ্চিম পাশের পুরো মাঠে খাল ছিল। পুরোটাই ভরাট করার কথা থাকলেও অর্ধেক জায়গায় ছাই দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। বাকি জায়গা এখনো ফাঁকা আছে। ছাই ঢাকতে মাটি ছিটানো হয়েছে। মাটির নিচে পুরোটাই ছাই আছে। কাজটি সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন আখতার করেছে। তার বাড়ি মাঠের পাশেই বলে জানান তিনি।
ঘুঘুডিমা গ্রামের যুবক মাসুম আলী জানান, জন্মের পর থেকেই দেখছি স্থানীয় ছেলেরা এই মাঠে খেলাধুলা করে। কিন্তু মাঠের পাশে কিছু অংশ গর্ত ছিল। তাতে সারা বছর পানি জমে থাকত। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন আখতার উপজেলা থেকে বরাদ্দ নিয়ে গর্ত ভরাটের কাজ শুরু করেন। শুরু থেকেই ছাই দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। তবে এতে কী পরিমাণ সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা আমরা জানি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, শুনেছি উপজেলা পরিষদ থেকে সরকারি বরাদ্দ দিয়ে খেলার মাঠের গর্তটি ভরাট কাজ করা হচ্ছে। আমার জানা নাই, সরকারি কোনো বরাদ্দ পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে করা হয়। আবার ছাই ঢাকতে ওপরে মাটি ছিটানো হয়। সদর উপজেলার আতাহারে থাকা অটোরাইস মিলের ছাইগুলো ৫০ থেকে ১০০ টাকা চা খরচ দিলেই ছাই ফেলে যাবে।
বিষয়টি স্বীকার করে ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন আখতার জানান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিষেধ করার কারণে সেখানে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া হয়নি। তবে গর্তের বেশির ভাগই ভরাট দেওয়া হয়েছে ছাই দিয়ে। কারণ অনেক বড় গর্ত ছিল মাঠের পাশে। এমনকি ট্রাক্টর প্রতি ড্রাইভারদের ছাই নিতে ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বড় গর্ত তাই মাটির পাশাপাশি ছাই দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এখন আরও জায়গায় মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তবে স্থানীয়রা জানান, ফুটবল মাঠের পশ্চিম পাশে প্রায় ১৫০ ফুট জায়গাজুড়ে ৩ থেকে ৫ ফুট গভীরতায় গর্ত ছিল।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মওদুদ আলম খার অফিসে গিয়ে তার কাছে স্লুইসগেট ফুটবল মাঠের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ও গর্ত ভরাট প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলেন।
পরে মুঠোফোনে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সীমানাপ্রাচীর দেওয়ার মতো পরিস্থিতি না থাকায় সেখানে তা দেওয়া হয়নি। তবে ছাই দিয়ে গর্ত ভরাটের বিষয়ে বলেন, প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী ছাই দিয়ে ভরাটের কোনো সুযোগ নেই। মাটি দিয়েই ভরাট করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের বাইরের কিছু অংশ ভরাট করতে গিয়ে ছাই দেওয়া হতে পারে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইফফাত জাহান ঢাকা পোস্টকে জানান, স্লুইসগেট ফুটবল মাঠ ভরাট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে তেমন কোনো খবর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মো. জাহাঙ্গীর আলম/এনএ