কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় ব্রি-২৮ জাতের ধানে নেক ব্লাস্ট (শীষ মরা) রোগ দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন- কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শেও ধানের শীষ মরা রোগ ঠেকাতে পারেননি। 

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করতে সবমিলিয়ে ব্যয় হয় ৮-৯ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হতো ১৮-২০ মণ। সেখানে এই নেক ব্লাস্ট রোগের কারণে বিঘাতে ১০ মণ ধানও হবে না।  আগামীতে আর ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করবেন না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। 

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ১২ হেক্টর জমিতে। এই নেক ব্লাস্ট রোগের কারণে ৭-৮ হেক্টর জমির ব্রি-২৮ জাতের ধানের ক্ষতি হয়েছে। 

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নেক ব্লাস্ট রোগে ব্রি-২৮ জাতের ধান চিটা হয়ে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেক নামে এক কৃষক বলেন, আমি ১ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধান লাগাইছি। অর্ধেকই নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন প্রকার ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। কৃষি বিভাগও জানে না এই রোগের চিকিৎসা। এবার যা হইছে হইছে আগামীতে আর আমি ব্রি-২৮ ধান আবাদ করব না। এক এক করে ২-৩ বার মাইর খাইলাম। 

একই এলাকার কফিয়াল বলেন, আমিও ১৬ শতক জমিতে ব্রি-২৮ ধান লাগাইছি। ধান হয় নাই, শুধু চিটা আর চিটা। যেসময় এই রোগটা হয় অনেকের সাজেশনে কত প্রকার ওষুধ যে জমিতে প্রয়োগ করছি,  কোনো কাজ হয় নাই। কৃষি বিভাগের লোকজনও আমাদের কোনো উপকার করতে পারে নাই। গত ২-৩ বছর থেকে ব্রি-২৮ ধান চাষ করে ক্ষতি হচ্ছে। এবারেই যা আবাদ করছি আর না।

কাশেম আলী নামে এক কৃষক বলেন, আমিও এক বিঘা জমিতে ব্র্রি-২৮ ধান চাষ করছি। আমারও জমির ধানে এই রোগ ধরছে। ধানে এই রোগ হলে গরু-ছাগলও এর খড় খেতে চায় না।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, আপনারা জানেন ব্রি-২৮ ধান আগাম চাষ করা হয়। যখন ফলন আসে সে সময় বৃষ্টির কারণে বিচ্ছিন্ন কিছু জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ৭-৮ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা যদি সময় মতো নেক ব্লাস্ট রোগের ওষুধ প্রয়োগ করতো, তাহলে ক্ষতিটা কম হতো।

জুয়েল রানা/আরএআর