অসুস্থ নাসিমার স্বামীর হাতে সহায়তার টাকা তুলে দেন ওসি গোলাম কবির

অভাবগ্রস্ত ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রবিউল ইসলাম। অসুস্থ স্ত্রী নাসিমাকে বাঁচাতে অনেকটা যুদ্ধ করছেন। তবুও কোনো উপায় খুজে পাচ্ছেন না। এমন সময় এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। ফান্ড গঠন করে চিকিৎসা সহায়তার টাকা তুলছেন সাতক্ষীরার আশাশুনি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কবির। ইতোমধ্যে তিনি সহায়তার ৩৪ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন অভাবগ্রস্ত পরিবারটির হাতে। 

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের আরার কাদাকাটি গ্রামের বাসিন্দা ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রবিউল ইসলাম। তার এক ছেলে ইদ্রিস আলী (৯) ও এক মেয়ে লামিয়া (৬)। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার হয় পরিবারটির। স্ত্রী নাসিমা খাতুন (৩৫) ইটভাটা শ্রমিকের কাজ করেন। সেই স্ত্রী এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত। 

ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রবিউল ইসলাম বলেন, এক শতক জমির ওপর দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে কুঁড়েঘরে বসবাস করি। রোজগার করলেই কেবল মুখে ভাত ওঠে। ইলেকট্রিকের কাজও সব সময় হয় না। এখন স্ত্রীর গলায় ক্যান্সার ধরা পড়েছে। খুলনায় নিয়ে স্ত্রীকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদকে দেখিয়েছি। বর্তমানে তারই তত্ত্বাবধানে রয়েছে স্ত্রী।

তিনি বলেন, ঠিকমত চিকিৎসা করলে নাসিমা সুস্থ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তার জন্য প্রয়োজন চারটি কেমোথেরাপি। প্রথম কেমোটি দিতে খরচ ৬৫ হাজার টাকা, এক মাস পর দ্বিতীয়টি ২৮ হাজার টাকা ও পরের দুটি দিতে ২২ হাজার টাকা করে খরচ হবে। আমার তো কিছু নেই। যেটুকু ছিল সর্বস্ব বিক্রি করে দিয়ে ২৩ হাজার ৪৩৫ টাকা হয়েছে। 

রবিউল ইসলাম বলেন, থানার ওসি স্যার ১৫ দিন আগে ঘটনাটি শুনে বাড়িতে আসেন ফলমূল নিয়ে। নগদ চার হাজার টাকা তুলে দেন। বলেন, আমরা ফান্ড গঠন করে চিকিৎসার জন্য সহায়তা করবো। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আবারও বাড়িতে এসেছিলেন ওসি স্যার। চিকিৎসার জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়ে গেছেন। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাকি টাকা কোথায় পাবো জানি না।

রবিউল ইসলামের প্রতিবেশী এম এম নুর আলম জানান, পরিবারটি একেবারেই হতদরিদ্র। নাছিমা খাতুন চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। কয়েক মাস আগে কাজ করার সময়ে তার গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। অ্যাম্বুলেন্সযোগে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেখে এক মাস ১৮ দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সেখানকার চিকিৎসকরা ঢাকায় নিয়ে ভালো ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ঘটনাটি জেনে আশাশুনি থানার ওসি পাশে দাঁড়িয়েছেন পরিবারটির। 

কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাসেত হারুন চৌধুরী জানান, নাছিমা খাতুন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। আমি কিছু সহায়তা করেছি। 

আশাশুনি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কবির বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি নিজেই ওই বাড়িতে গিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিই। এরপর থানায় ফিরে সমাজের বিত্তবানদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সহায়তা ফান্ড গঠন করি। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ফান্ডে জমা হওয়া টাকাটি ওই পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে এসেছি। যেন তারা চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নাছিমা খাতুনকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তারা।

ওসি বলেন, মানবিক এই বিষয়টি যদি কোনো হৃদয়বান মানুষের দৃষ্টিতে পড়ে, তারাও যেন এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়। পরিবারটির একটি কুড়েঁঘর ছাড়া কিছুই নেই। একটু সহানুভূতি নিয়ে পাশে দাঁড়ালেই বেঁচে যাবে পরিবারটি। 

আকরামুল ইসলাম/আরএআর