চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া রাজশাহীগামী রাজশাহী মেইল ট্রেনের সঙ্গে ভটভটির ধাক্কায় তিনজন নিহত হওয়ার পর অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে গেট নির্মাণ করা হয়। দুর্ঘটনার পরদিন চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে ঘটনাস্থল আলীনগর-হাজীর মোড় ও গণকা-বিদিরপুর মোড়ে বাঁশের গেট বসানো হয়। রেলক্রসিংয়ের রাস্তার উভয় পাশে বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী এই রেলগেট নির্মাণ করা হয়। 

গেট নির্মাণের পর থেকে পৌরসভার দুই আনসার সদস্য ট্রেন আসা-যাওয়ার সময় এই গেট নিয়ন্ত্রণ করেন প্রায় এক মাস। তবে এরপর গত ৩ মাস ধরে গেট নিয়ন্ত্রণ করতে যাননি পৌরসভার আনসার সদস্যরা। এতে আবারও দুই রেলক্রসিংয়ে গেট থাকলেও এখন নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে আবারও অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। 

স্থানীয়রা বলছেন, তিনজনের মৃত্যুর পর রেলগেট নির্মাণের পর তা নিয়ন্ত্রণ করতে দুটি জায়গায় পৌরসভা থেকে দুইজন আনসার সদস্য নিয়োগ করা হলেও এখন তারা কাজ করছেন না। আগে রেলগেট না থেকে অরক্ষিত ছিল। আর এখন রেলগেট থেকেও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে এই দুই রেলক্রসিং। রেলগেটে আবারও দুইজন লোক দেওয়ার দাবি তাদের। তাতে বিভিন্ন দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবে পথচারীরা।

গনকা-বিদিরপুর রেলক্রসিংয়ের দোকানদার আব্দুল মালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেলগেট নির্মাণের পর মাসখানেক চালু ছিল। পৌরসভা থেকে লোক এসে ট্রেন যাওয়ার সময় রেলগেট নিয়ন্ত্রণ করত। এখন তারা আর ট্রেন আসার সময় আসেন না। ফলে রেলগেট থাকার পরও অরক্ষিত হয়ে পড়েছে রেলক্রসিং। মাঝেমধ্যে ট্রেন আসার সময় এখানে তরকারি বিক্রি করে একটা লোক রেলগেট নামায়। তবে তা নিয়মিত না। আবারও যেকোন সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

স্থানীয় বাসিন্দা সুজন আলী জানান, গনকা-বিদিরপুর রেলক্রসিংয়ে রেলগেট চালুর পর ২০-২৫ দিন মতো রেলগেট ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। পরে একটি ট্রেন আসার কয়েকমিনিট আগেই রেলক্রসিংয়ের দুই দিকের রেলগেট নামিয়ে রাস্তায় চলাচল বন্ধ করে। এ সময় রাস্তা পার হতে আসা কয়েকজন মাতালের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় আনসার সদস্যের। এরপর তাকে বেধড়ক মারধর করে মাতালরা। এরপর থেকেই দুটি রেলক্রসিংয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় রেলগেট নিয়ন্ত্রণ বন্ধ হয়ে যায়। 
 
হাজ্বির মোড় রেলক্রসিংয়ের বাসিন্দা খাদেম আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৌরসভার আনসার সদস্যের সঙ্গে কয়েকজন মাতালের গন্ডগোল হওয়ার পর থেকে রেলগেট নিয়ন্ত্রণ বন্ধ আছে। এখন ঝুঁকি নিয়েই রেলক্রসিং পার হচ্ছে পথচারীরা। এই রেলক্রসিংয়েই ৪ মাস আগে অরক্ষিত থাকার কারণে ট্রেনের সঙ্গে ভুটভুটির ধাক্কায় তিনজন মারা যায়। রেলগেট থাকার পরও ট্রেন আসার সময় নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে আবারও যেকোন সময় এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে জানান, ট্রেনের ধাক্কায় তিনজনের মৃত্যুর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমানের নির্দেশে হাজির মোড় ও বিদিরপুর মোড়ে অস্থায়ী রেলগেট নির্মাণ করা হয়। এখানে পৌরসভার আনসার সদস্যরা পালাক্রমে ডিউটি করতেন। কিন্তু রাত ১২টার দিকে ও সকাল ৫টার দিকে ট্রেন যাওয়া-আসা করার কারণে ডিউটি করতে তাদের ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। তাই আপাতত তারা রেলগেট নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছেন না। 

তিনি আরও জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের প্রচেষ্টায় মহাডাঙ্গা থেকে আলীনগর রেলগেট পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে পার্শ্ব রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন হলে আর কোনো রেলগেট নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়বে না। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান বলেন, অস্থায়ী রেলগেটে নিয়ন্ত্রণ না করার বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে আপনাকে জানাতে পারব। 

প্রসঙ্গত, গত ২৪ জানুয়ারি সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীনগর হাজির মোড়ে অরক্ষিত রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেন ভটভটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন- ভটভটির চালক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা কেন্দুল গ্রামের নাইমুল হক (৪০), দুই যাত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীনগর ভূতপুকুর গ্রামের আবদুল গণির ছেলে ফুলচান আলী (৫৫) ও রইস উদ্দীনের ছেলে শেহের আলী (৪৫)।

জাহাঙ্গীর আলম/আরআই