মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় মরিয়ম আক্তার (১২) নামে এক ছাত্রীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মদিনাতুল মনোয়ারা মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ইউনুস মিয়ার (৪০) বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে রোববার (১২ জুন) বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন নিহত মরিয়মের স্বজন ও স্থানীয়রা।

মরিয়ম আক্তার সদর উপজেলার মহাকালী ইউনিয়নের উত্তর মহাকালী তেলেরপাড়া গ্রামের মোশাররফ হাওলাদারের মেয়ে। সে ওই এলাকার মদিনাতুল মনোয়ারা মহিলা মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

এ ঘটনায় গত শুক্রবার (১০ জুন) মরিয়ম আক্তারের মা ফিরোজা বেগম তিনজনের নাম উল্লেখসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ইউনুস মিয়া, তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (৩০) ও মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি জামাল উদ্দিনের স্ত্রী হাবিবা আক্তার (২৭)। গতকাল শনিবার (১১ জুন) সকালে ইউনুস মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

মানববন্ধনে নিহত মরিয়মের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা, তুমি আমার মা। তুমি স্বজন হারিয়েছে, তুমি জানো স্বজন হারানোর কী ব্যথা। তুমি আমার পাশে দাঁড়াও। আমার ওপর অনেক চাপ আইতাছে। আমাকে অনেক পেরেশানি দিতাছে। আমি যাতে আজকে মানববন্ধন না করি। আমাকে বলতেছে- এগুলি ভালো হইবো না, আমার পরিণতি খারাপ হইবো। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়েকে হত্যা করছে সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে। সদর হাসপাতালে আইনা আমাকে ২টা বাজে খবর দিছে- আমার মেয়ে মরিয়ম অসুস্থ, হাসপাতালে আসতে হবে।’

নিহত মরিয়মের বাবা মোশাররফ হাওলাদার বলেন, ‘মাদ্রাসা এখন ব্যবসা হইয়া গেছে। মাদ্রাসা দেখাইয়া বিদেশিদের থেইকা খালী টাকা আদায় করে।  এগুলোর অধিকাংশরই লাইসেন্স নাই। লাইসেন্স ছাড়া যত মাদ্রাসা আছে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হোক। আমি চাইনা আমার মেয়ের মতো আর কারও মেয়ে এ রকম হোক।’  

নিহত মরিয়মের বড় মামা শহিদুল ইসলাম জন্টু বলেন, ‘আমার বোন সকাল ৯টায় আমার ভাগ্নিকে খাবার দিয়ে আসছে। ১০টা বাজে ওর সঙ্গে শেষ কথা বলে আসছে। হুজুর নামের যে ভণ্ডগুলো আছে, এগুলোর প্রকাশ্যে ফাঁসি চাই। সারাদেশে এমনকি বিশ্বে যেন এ রকম ঘটনা আর না হয়।’

প্রসঙ্গত, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মহাকালী ইউনিয়নের উত্তর মহাকালী তেলেরপাড়া গ্রামের মরিয়মকে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার মদিনা বাজেরে অবস্থিত মদিনাতুল মনোয়ারা মহিলা মাদ্রাসা থেকে কাজের কথা বলে বাসায় নিয়ে যান মাদ্রাসার অধ্যক্ষ্য ইউনুস মিয়া। পরে দুপুর ২টার দিকে মরিয়মের হার্ট অ্যাটাক করেছে সদর হাসপাতালে আছে বলে মরিয়মের পরিবারের কাছে খবর দেন অধ্যক্ষ। বিকেল ৩টার দিকে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে মরিয়মের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসেন মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি জামাল ও তার ছোট বোন জামাই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ইউনুস মিয়া। এ ঘটনায় মরিয়মের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে শুক্রবার ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে মামলার প্রধান আসামি ইউনুস মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। 

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে এজাহার নামীয় আসামি করে মামলা করা হয়েছে। প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুইজন নারী আসামি পলাতক রয়েছেন।

ব.ম শামীম/আরএআর