ববির ঘটনায় গ্রেপ্তার ২, শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ অব্যাহত
গ্রেপ্তার রনি ও ফিরোজ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেস থেকে নামিয়ে মারধরের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত আড়াইটার দিকে রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে আইওয়াশ আখ্যা দিয়ে সড়ক অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গ্রেপ্তাররা হলেন, এমকে পরিবহনের সুপারভাইজার আবুল বাশার রনি (২৫) ও সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের সহকারী মো. ফিরোজ (২৪)।
বিজ্ঞাপন
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী অমিত হাসান দাবি করেন, কাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানি না। তবে শিক্ষার্থীরা যাদের শনাক্ত করেছেন সেইসব মূল হোতাদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থী সুজয় শুভ বলেন, আমাদের সন্তুষ্ট করার জন্য দুজন নিরীহ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মূলত প্রকৃত হামলাকারীদের আড়াল করার চক্রান্ত এটি। আমাদের দাবি যারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তারা যাদের নাম বলেছে সেই হোতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। যারা মারধর করেছেন তাদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরা সড়ক ছাড়বে না।
বিজ্ঞাপন
হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাহামুদ হাসান তমাল বলেন, রূপাতলী হাউজিং এলাকায় আমাদের হারুন অর রশিদ ছাত্রাবাসে হামলার পর সামনে থাকা মুসা প্যালেসের সিসি ক্যামেরায় সবকিছু রেকর্ড ছিলে। কিন্তু সেই রেকর্ড শুক্রবার সন্ধ্যার পর ডিবি পরিচয়ে ফুটেজগুলো ডিলেট করে দেয়। সেই ফুটেজে সব কিছু রেকর্ড হয়েছে। ওই ফুটেজ দেখলেই জানা যেত কারা হামলা চালিয়েছে?
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, ওই দুজনকে গ্রেপ্তারই শেষ কথা নয়। পরবর্তীতে যারা শনাক্ত হবেন তাদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যায়নি। পেলে হামলাকারীদের শনাক্তে সুবিধা হত।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের সামনে এবং শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর টোল ঘরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চতুর্থদিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে। এর আগে শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে ৬টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে ১৩ ঘণ্টার জন্য কর্মসূচি শিথিল করেছিল শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি শনাক্তকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত দেড়টার দিকে রূপাতলী হাউজিংয়ের সি-ব্লকের হারুন ম্যানশন ভবনের মেসে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সেখানে অবস্থানকারী ছাত্রদের মারধর করে মারাত্মক জখম করা হয়। হামলায় ১১ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ছুরি দিয়ে কোপ দেন রূপাতলী বিআরটিসি কাউন্টারের হেলপার রফিক। এ সময় আরও এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করেন রফিক ও কাউন্টারম্যান বাদল। প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি কাউন্টার ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করেন।
সড়ক অবরোধ তুলে দেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে আসেন শ্রমিক ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ। এ সময় শ্রমিক নেতা কাওছার হোসেন শিপনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় শিক্ষার্থীদের। সড়ক অবরোধের মধ্য থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন মোল্লাকে লাঞ্ছিত করেন শিক্ষার্থীরা। সেই ঘটনার রেশ ধরে কাওছার হোসেন শিপন, রফিকুল ইসলাম মানিকের লোকেরা রাতে মেসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। তবে কাওছার হোসেন শিপন বলেন, এই হামলা বা ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
হামলার পর পরই রাত আড়াইটার দিকে সড়কে কাঠ পুড়িয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের আশ্বাসে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়ে বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় ১৪ ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি অনুসারে মামলা দায়ের না করায় ফের শুক্রবার থেকে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি