বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে চলা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শিথিল করেছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ হরতাল কর্মসূচি চলবে। দুপুর ২টা থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা থাকায় হরতাল শিথিলের ঘোষণা দেন কাদের মির্জা। 

সকাল ১০টার দিকে হরতালের সমর্থনে মিছিল শেষে কোম্পানীগঞ্জের রূপালী চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন। 

এ সময় মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পরীক্ষা থাকায় আজকের হরতাল শিথিল করে দুপুর ১২টা পর্যন্ত করা হয়েছে। 

এদিকে হরতালে নাশকতা ঠেকাতে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়সমূহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সকালে মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সমর্থকরা থানার সামনে অবস্থান করতে চাইলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

কোম্পানীগঞ্জ শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস-ট্রাক ছেড়ে যায়নি এবং বাইরে থেকে কোনো বাস-ট্রাক কোম্পানীগঞ্জে আসেনি। হরতালের সমর্থনে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে আন্তজেলা রুটের সকল বাস। তবে সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। 

শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়সমূহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পৌর শহর ও বাস টার্মিনাল এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। হরতালের কারণে শহরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। 

কোম্পানিগঞ্জ থানা পুলিশের ডিউটি অফিসার এএসআই ইসমাইল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল ৮টা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সমর্থকরা থানার সামনে অবস্থান করতে চাইলে আমরা লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। হরতালে সহিংসতা ঠেকাতে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়সমূহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে হরতালের সমথর্ন ও হরতাল সফল করার আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাপরাশিরহাট বাজারে কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদল অনুসারী আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদেকে কাদের মির্জা নিজের অনুসারী দাবি করেন এবং তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এদিকে সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল থেকে আসার সময় চরকাঁকড়া টেকের বাজার নামক স্থানে বাদল গ্রুপের সদস্য হিসেবে পরিচিত ফখরুল ইসলাম সবুজের নেতৃতে রাস্তায় ব্যারিকেড দিলে আবদুল কাদের মির্জা গাড়িবহরসহ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কয়েক ঘণ্টা পর কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ, অতিরিক্ত রিজার্ভ পুলিশ ও র‌্যাবের কয়েকটি গাড়ি গিয়ে সড়ক অবরোধ তুলে দিয়ে মেয়র কাদের মির্জাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। 

এরপর তিনি বসুরহাট পৌরসভা মিলনায়তনে নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের জানান, এমপি একরাম চৌধুরীর বাড়িতে শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বৈঠক শেষে সন্ত্রাসীদের দুই ভাগে বিভক্ত করে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে বাদলের নেতৃত্বে চাপাশিরহাট ও সবুজের নেতৃত্বে টেকের বাজারে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মিজানুর রহমান বাদল, চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, নজরুল ইসলাম শাহীন, হাসিবুস শাহীদ আলোক, ফখরুল ইসলাম সবুজ, ভাগিনা ফখরুল ইসলাম রাহাত, মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু, মাহবুবুর রহমান আরিফ গুলি ছুড়েছে।

কাদের মির্জা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এ আক্রমণ সম্ভব নয়। এজন্য আমি মামলায় নোয়াখালীর ডিসি, এসপি, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ও পরিদর্শক (তদন্ত) কেও আসামি করবো। এছাড়া ফেনীর এমপি নিজাম হাজারী, নোয়াখালীর এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, ফেনী পৌরসভার মেয়র স্বপন মিয়াজী, দাগনভুঞা উপজেলার চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপন, নোয়াখালী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন জেহান, সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব বেলায়েত হোসেন, সেতুমন্ত্রীর এপিএস মহিতুল, পিএ আবদুল মতিন ও পিআরও নাছেরকেও এ মামলায় আসামি করা হবে।

হাসিব আল আমিন/আরএআর