মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যাকবলিত হয়েছে দুই ইউনিয়নের প্রায় হাজারো মানুষ।

টানা তিন দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামার কারণে নেমে এসেছে এ দুর্যোগ। হাওর তীরবর্তী জনপদের বাড়িগুলো এখন পানির নিচে। ইতিমধ্যে কয়েটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পাঠদান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাওরের পানি বেড়ে গিয়ে দুই ইউনিয়নের শাহপুর, দিগলবাগ, বেলাগাঁও, জাঙ্গিরাইসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে পাহড় ও টিলা বসতি এলাকায় কয়েকটি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে গৃহপালিত পশুর মৃত্যু হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে জুড়ী লাঠিটিলা সড়কে যান চলাচল।

জুড়ী উপজেলা প্রশাসন জানায়, জুড়ী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টির সঙ্গে উজানের পানির ঢলের জন্য উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। অতিরিক্ত বর্ষণের জন্য গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম গোয়ালবাড়ি পাহাড়ধস হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইতোমধ্যে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যার্ত ও অসহায় মানুষদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, পাহাড়ধস, পানিবন্দি লোকদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা এবং জরুরি সেবা প্রদানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানারে নেতৃত্বে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

স্কুলশিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, আজ আমার নিজ কর্মস্থল হরিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে ডুবে যায়। বিদ্যালয়ের অফিসে পানি ঢুকে গেছে এবং আঙিনায় ও থইথই পানি।

মক্তদীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ইশাক আলী জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভোগতেরা গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিক বলেন, আমাদের গ্রামে অনেক মানুষ গৃহবন্দী হয়ে আছে। অনেক মানুষ নিজ বসতবাড়ি রেখে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।

বাছিরপুর গ্রামের মাহবুব আলম জলিল জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদী খাল-বিল ভরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বাছিরপুর এলকায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির রাস্তার ওপর পানি উঠে পড়েছে। বেশ কিছু ঘরের দরজার সামনে পানি ছুঁইছুঁই করছে। অনেকেই আবার মাটির ঘরের ভেতর বাঁশের মাচা দিয়ে পরিবারের শিশুদের নিয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে।

জুড়ী উপজেলার পশ্চিম গোয়ালবাড়ী এলাকার কামরান জানান, টানা ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় পশ্চিম গোয়ালবাড়ী এলাকায় পাহাড় ধসে পড়ে। এতে মো. মনতুজ মিয়ার ঘর ভেঙে দুটি গরু এবং ৫টি ছাগলসহ ২০টি হাঁস-মুরগি মাটিচাপায় মারা যায়। ঘর ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪ থেকে ৫টি পরিবার। এখন পাহাড় ধসার কারণে প্রায় ২০টি পরিবার আতঙ্কে আছে।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুড়ী উপজেলায় হাওরপাড়ের পাঁচটি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। হাকালুকি হাওরের পানি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এই ভোগান্তিতে পড়েছেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

এদিকে কুলাউড়া উপজেলার হাওড় অঞ্চলে দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কর্তৃপক্ষ (১৮ জুন) শনিবার থেকে দুটি বৈদ্যুতিক ফিডার অনির্দিষ্টকালর জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফিডার দুটি হলো কুলাউড়া উপজেলার ইসলামগঞ্জ এবং জুড়ীর নার্সারি ফিডার। ফিডার দুটি বন্ধ হওয়ায় কুলাউড়ার ভুকশিমইল, কাদিপুর, শশারকান্দি ইসলামগঞ্জ ও জুড়ী উপজেলা জায়ফর নগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার লোকজন বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন।

কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গনি জানান, কুলাউড়ায় প্রতিদিন পানি বৃদ্ধির কারণে হাওর এলাকার দুটি বিদ্যুতের ফিডার শনিবার থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি না কমা পর্যন্ত ওই দুটি ফিডার বন্ধ থাকবে। কুলাউড়ায় অবস্থিত বিদ্যুতের গ্রিড অফিসের আশপাশের পানি উঠে পড়েছে। গ্রিডের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া স্থানীয় (কাপুয়া) নদীটি পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় গ্রিডে পানি ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।

ওমর ফারুক নাঈম/এনএ