পবিত্র ঈদুল আজহার আগে হু হু করে বাড়ছে কোরবানির পশুর দাম। প্রতিবছর জেলায় হাজার হাজার খামারি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া পালন করে থাকেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গৃহপালিত পশুগুলো প্রস্তুত করেছেন তারা। কিন্তু হঠাৎ গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিরাও বাড়িয়ে দিয়েছেন দাম।

মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহা দরজায় কড়া নাড়ছে। আত্মত্যাগের এই ধর্মীয় উৎসবের জন্য কোরবানির পশু হিসেবে তালিকার শীর্ষে থাকে গরু। তবে দেশে গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এলেও প্রতিবছরই বাড়ছে গরুর দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বগুড়া জেলার পশুর হাটগুলোয় কোরবানি দেওয়ার উপযুক্ত পশুর দাম চড়া দেখা গেছে।

বগুড়ায় গত বছরের চেয়ে গরুর দৈনিক খাবারের খরচ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। গম, মটরের ভুসি, ভুট্টার আটা ও ধানের কুড়ার দাম বাড়তি হওয়ায় কোরবানির দেড় মাস আগেই থেকে বাড়তে শুরু করেছে গরু, ছাগল, ভেড়ার দাম।

ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, ঈদুল আজহার সময় আরও দাম বাড়বে কোরবানির পশুর। গত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার জেলার মহাস্থান হাট, ঘোড়াধাপ হাট, সুলতানগঞ্জ হাট, গাবতলী উপজেলার নাড়ুয়ামালা হাট, ডাকুমারা হাটে দেখা গেছে, কোরবানিযোগ্য গরু, ছাগল, ভেড়ার দাম চড়াও।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে এবারও পশুর সংকট নেই। কোনো পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না। তবে অধিদপ্তরের মতো খামারি ও বেপারিরা বলছেন, পশুর দাম এবার কিছুটা চড়া থাকবে।

গাবতলী নাড়ুয়ামালা হাটে পশু ব্যবসায়ী আজিজার রহমান জানান, এক মাস আগে যে গরু ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি, সেটি এখন ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। গরু পালনকারীদের কাছে কিনতে গেলে তারা বলছে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের গোখাদ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। সে কারণে গরু পালনে খরচ বেশি হচ্ছে। তাই বেশি দামে গরু বিক্রি করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ ৩০ থেকে ৪০ দিনে গোখাদ্যের দাম মণপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গরুর অন্যতম খাবার গমের ভুসি। গত তিন দিনের ব্যবধানে এ ভুসির ৩৭ কেজির বস্তার দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা। আগে এক বস্তা ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। দাম বেড়েছে ধানের কুড়া ও গমের ছালেরও। বস্তাপ্রতি এ দুই ধরনের গোখাদ্যের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। সরিষার খৈল, ছোলার ভুসি, খেসারি, মাষকালাইয়ের ভুসিরও দাম বেড়েছে। শনিবার (২১ মে) বাজারে সরিষার খৈল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা, ছোলার ভুসি ৫৫, খেসারি ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা দরে।

ছয় মাসের ব্যবধানে মাষকালাইয়ের ভুসির দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আগে এক বস্তা মাষকালাইয়ের ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা। ছয় মাস আগে সরিষার এক বস্তা খৈল বিক্রি হতো ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা। একই সময়ে অ্যাংকর ডালের ভুসির ৩৫ কেজির বস্তার দাম ছিল ৮০০ টাকা, যা এখন বেড়ে হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।

ল্যাড়া বাজারের মাংস ব্যবসায়ী চান মিয়া জানান, বর্তমানে বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকা। সেই হিসাবে তিন মণ ওজনের একটি গরুর দাম পড়ে ৭২ হাজার টাকা। তবে ঈদুল ফিতরের আগে থেকে গরুর মাংসের বাজার ওঠানামা করেছে। অর্থাৎ কেউ একটি গরু কিনতে চাইলে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা বেশি গুনতে হতে পারে এখন।

বগুড়া সদর ঘোড়াধাপের হাটে গরু বিক্রিতা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গোখাদ্যর মূল্যবৃদ্ধির কারণেই কোরবানির আগে গরু বিক্রি করলাম। গোখাদ্যর দাম স্বাভাবিক থাকলে আরও কিছুদিন পালন করে ঈদের বাজারে বিক্রি করতাম। তারপরও ঈদের কয়েক দিন আগে কখনো বাজার চাঙা আবার কখনো মন্দাভাব হয়। সে কারণে তাড়াতাড়ি করে গরু বিক্রি করলাম। যে হারে খাদ্যর দাম বেড়েছে, সে হারে গরুর দাম বাড়েনি। যে দামে গরু বিক্রি করলাম, হিসাব করলে আর্থিকভাবে ক্ষতিই হবে।

আরেক গরু পালনকারী দশটিকা এলাকার মোজাম মন্ডল জানান, খাদ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে গরু-ছাগলের দাম তেমনটা বাড়েনি। গত বছর কোরবানি ঈদের আগে সব গোখাদ্যের দাম স্বাভাবিক ছিল। এবার ঈদের দুই মাস আগেই তা বেড়ে দ্বিগুণভ অথচ গরু, ছাগল, ভেড়ার দাম বাড়েনি। তাহলে পশু পালন করে কি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে? 

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমাদের দুটি মিটিং হয়েছে। গোখাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ চলমান আছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে। সে কারণে কোরবানির পশুর দাম বাড়তে পারে। তবে জেলায় কোরবানির জন্য যথেষ্ট পশু রয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, বগুড়ায় জেলায় কোরবানির জন্য প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার পশু লালনপালন করা হচ্ছে।

এনএ