সিলেটে তিন খুন: বয়স বিবেচনায় সেই কিশোর সেফহোমে
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার কিশোর
সিলেটের খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বহর আবাসিক এলাকার মীর মহল্লায় মা, বোন ও ভাইকে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার কিশোরকে বাগবাড়ি সেফহোমে পাঠানো হয়েছে। মামলায় কিশোরের বয়স ১৯ বছর দেখানো হলেও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবান্দবন্দিতে ওই কিশোর তার বয়স ১৭ বছর বলায় তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে সেফহোমে পাঠানো হয়। পাশাপাশি তার বয়স নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই কিশোর তার বয়স ১৭ বছর বলে। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুলিশের কাছ থেকে তাকে বাগবাড়ির সেফহোমে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ তার বাড়ি বিয়ানীবাজার থেকে বয়স নিশ্চিতের সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন। সেখানে তার বয়স পাওয়া গেছে ১৭ বছর ১ মাস।
বিজ্ঞাপন
সিলেট জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. তমির হোসেন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ওই কিশোরকে শিশু আদালতে হাজির করে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য আবেদন করা হবে। তার বয়স এখনও ১৮ বছর হয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, শিশু আইন ও শিশু সুরক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী মামলাটি শিশু আদালতে স্থানাস্তর করা হবে। আদালত যদি তাকে জামিন না দেন তাহলে তাকে টঙ্গী অথবা গাজীপুরের শিশু উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠানো হবে।
বিজ্ঞাপন
শাহপরাণ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতে ওই কিশোর তার বয়স ১৭ বলায় তাকে সেফহোমে পাঠানো হয় ও তার বয়স নিশ্চিতের নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে তার বয়সের সকল প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। তার বয়স এখনও ১৮ বছর হয়নি।
জাতীয় শিশু সুরক্ষা নীতি ২০১১ এবং শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী শিশুর সুরক্ষা ও আইনী সহায়তা প্রদানে সরকার বদ্ধপরিকর ও অঙ্গীকারবদ্ধ। এতে বলা হয়েছে, কোনো শিশুকে অপরাধের কারণে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে তাকে কারাগারে পাঠানো যাবে না। তাকে শিশু উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠাতে হবে।
শিশু আইন ২০১৩ এর ২৬ (১) উপধারা অনুযায়ী বিচারকালীন শিশুকে সেফহোমে রাখার বিষয়টি সর্বশেষ পন্থা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, যার মেয়াদ হবে স্বল্প সময়ের জন্য।
শিশু আইন ২০১৩ এর ২৬ (৩) উপধারা অনুযায়ী শিশুকে সেফহোমে রাখা একান্ত প্রয়োজন হলে শিশু-আদালত, সংশ্লিষ্ট শিশুকে উক্ত আদালত থেকে যুক্তিসঙ্গত দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত কোনো প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর আদেশ দিবে। তবে এই উপধারার আওতায় কোনো শিশুকে প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হলে উক্ত প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকারী বেশি বয়স্ক শিশুদের থেকে ওই শিশুকে আলাদা রাখতে হবে।
সেই অনুযায়ী যদি আদালত তাকে জামিন না দেন তাহলে তাকে সেফহোমে রাখতে হবে। এইক্ষেত্রে ওই কিশোরকে টঙ্গী অথবা গাজীপুরের শিশু উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠানো হতে পারে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলেটের শহরতলীর খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বহর এলাকার মীর মহল্লা গ্রামে ৯ নম্বর বাসায় আবদাল হোসেন খানের দ্বিতীয় স্ত্রী রুবিয়া বেগম চৌধুরী, মেয়ে জান্নাতুল হোসেন মাহি ও তাহসান হোসেন খানকে কুপিয়ে হত্যা করে এক কিশোর। এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকেই ওই কিশোরকে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় নিহত রুবিয়া বেগমের ভাই আনোয়ার হোসেন থানায় মামলা করেন। মামলায় ওই কিশোর ও তার মাকে আসামি করা হয়।
শাহপরান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, সৎ মা ও ভাই-বোনকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে ওই কিশোর। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করা হয়। শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
তুহিন আহমদ/এসপি