বাইচ্চাটায় সকাল থেইক্যা কানতাছে সেমাই খাইতো, নুডুস খাইতো। কিন্তু কুনু ব্যবস্থা করতে পারতাছি না। এভাবেই বললেন, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ মিয়াধন মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা জুহিনা বেগম। 

উপজেলার শরিফনগর গ্রামের এই নারী জানান, গত ১৯ দিন এই বন্যাশ্রয়কেন্দ্রে স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে থাকছেন তিনি। তার স্বামী বন্যা আসার পর থেকে কোনো কাজ করতে পারছেন না। এ কারণে সন্তানদের জন্য সেমাই-চিনি কিনতে পারেননি। এছাড়া কেউ কোনো সাহায্যও করেনি।

একই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া সামছুল হক জানান, প্রায় ১ সপ্তাহ পূর্বে সরকারিভাবে থেকে ১ প্যাকেট সেমাই, ২৫০ গ্রাম চিনি, ১ কেজি আলু ও ৫ কেজি চাল দেয়া হয়েছিল। তবে কোরবানির মাংস তাদের ভাগ্যে জুটবে কিনা, তা জানেন না তিনি।

রোববার (১০ জুলাই) দেশব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদে নিজের বাড়িতে থাকার কথা থাকলেও বন্যার কারণে নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করতে হচ্ছে দুর্গত মানুষদের। হবিগঞ্জ জেলায় ১৫ হাজারের বেশি বন্যা দুর্গত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন।

সরেজমিনে আজমিরীগঞ্জ মিয়াধন মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে সেখানকার মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ খুব একটা পরিলক্ষিত হয়নি। অন্যদিনের মতোই ছিল তাদের আজকের দিনটা।

সেখানে অবস্থান করা ফুলমালা বেগম নামে এক বৃদ্ধা বলেন, নিজের বাড়িতে ঈদের যে কী আনন্দ, তা আশ্রয়কেন্দ্রে পাচ্ছি না। খুবই কষ্ট লাগছে। বাইচ্চা-কাইচ্চা গোশত খাওয়ার লাগি আর নতুন জামা-কাপড়ের লাগি কান্দাকাটি করতাছে। কিন্তু আমরার তো দেওয়ার মতো খেমোতা (ক্ষমতা) নাই। 

বন্যায় যেভাবে ভাইস্যা আইছলাম, অখনো এইরকমই আছি-বললেন ওই কেন্দ্রে আশ্রিত রেজবিনা আক্তার।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার সর্বশেষ দেয়া তথ্যানুযায়ী ৩৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৫ হাজার ৩৯৯ জন বাস করছেন।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানান, ঈদ উপলক্ষে বন্যার্তদের সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা শুরু হবার পর থেকে নগদ ৪০ লাখ ৮৭ হাজার ৫শ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ৮শ মেট্রিক টন চালের পাশাপাশি ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।

এমএএস