যশোরের অভয়নগরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন জহিরুল ইসলাম বাবু নামে এক ব্যক্তি। শুক্রবার (১৫ জুলাই) দুপুরে উপজেলার চেঙ্গুটিয়া গ্রামের শালবাগান এলাকায় আব্দুস সবুরের বাড়ির পেছনের কলাবাগানে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। 

জহিরুল ইসলাম বাবু সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার মশিউর রহমান বিশ্বাসের ছেলে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার চাপাতলা নগরঘাটের একটি ঘাসবন থেকে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে পুলিশ। 

নিহতরা হলেন- জহিরুল ইসলাম বাবুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বিথি (২৮), মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (৯) ও সাফিয়া খাতুন (২)। 

আটক জহিরুল ইসলাম বাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার বেশ কিছু দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি অন্যরাও জানে। শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি অভয়নগরের কলাতলা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে আসছিলেন। চাপাতলা গ্রামে আব্দুস সবুরের বাড়ির পেছনে কলাবাগানের কাছে এসে প্রথমে স্ত্রী বিথিকে এবং পরে বড় মেয়ে সুমাইয়া খাতুন এবং শেষে ছোট মেয়ে সাফিয়া খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মরদেহ তিনটি সেখানে ফেলে বাড়িতে এসে সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজনকে ঘটনা জানান বাবু। এ সময় তার বড় ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ বাড়িতে গেলে বাবু পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। 

নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বিথির বাবা মুজিবর রহমান বলেন, এক মাস আগে আমার মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বিথি ও তার দুই মেয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। শুক্রবার আমার জামাই জহিরুল ইসলাম বাবু আমার মেয়ে ও তার দুই মেয়েকে নিতে আসে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের বাড়ি থেকে তারা রওনা দেয়। এরপর আমার বিয়াই ফোন করে বলেন- ‘আমার ছেলেকে আটক করে পুলিশে দিয়েছি, আপনারা চলে আসেন।’ এরপর জানতে পারি আমার মেয়ে ও তার দুই মেয়েকে জামাই খুন করেছে। 

তিনি আরও বলেন, ১২/১৩ বছর আগে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মুজিবর রহমানের ছেলে জহিরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেতেই থাকতো। শুক্রবারও আমার বাড়িতে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর তারা আমার বাড়ি থেকে রওনা দেয়। 

বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই কামরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঞ্জুরুল ইসলামের কাছ থেকে খবর পেয়ে বাড়ি থেকে বিকেলে জহিরুল ইসলাম বাবুকে আটক করা হয়। আটক বাবু প্রাথমিকভাবে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। পরে সন্ধ্যায় অভয়নগর থানার এসআই মাসুদ রানা এসে বসুন্দিয়া ক্যাম্প থেকে বাবুকে নিয়ে যান। এরপর রাতে অভয়নগর থানা পুলিশ মরদেহ তিনটি উদ্ধার করেছে। 

অভয়নগর থানার  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শামীম হাসান বলেন, জহিরুল ইসলাম বাবু তার স্ত্রী ও দুই কন্যাকে হত্যা করেছেন। নিহত তিনজনের মরদেহ উপজেলার চাপাতলা নগরঘাটের ঘাসবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কেন বা কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। এ ঘটনার পর ঘাতক নিজে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। 

যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ডিবির ওসি রূপন কুমার সরকার জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আসামি জহিরুল ইসলাম বাবু শ্বশুরবাড়ি অভয়নগরের সিদ্দিপাশা থেকে ফেরার পথে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন। এরপর কোতোয়ালি মডেল থানার অধীনে বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পে আত্মসমর্পণ করেন। 

আরএআর