পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে মরিয়া নীলফামারী হাসপাতাল
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের ঠিকাদারি নিয়ম লঙ্ঘন করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দিতে মরিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে দরপত্রে উল্লেখ থাকা সমস্ত কাগজ পত্র জমা দেওয়ার পরও রেডিশন ডিজিটাল টেকনোলজি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন কারণ দেখিয়ে জনবল সরবরাহে অযোগ্য দেখানো হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গত ২০ জুন আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ছয়টি সিডিউল বিক্রি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৫ জুলাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেডিশন ডিজিটাল টেকনোলজি লিমিটেড, মেসার্স ফাস্ট নর্থ বেঙ্গল সিকিউরিটি অ্যান্ড রিক্রুটিং সার্ভিস এবং ফিহা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। পরে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেন কমিটির আহ্বায়ক জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মো. আবু আল হাজ্জাজ।
বিজ্ঞাপন
গত ১৪ জুলাই একটি মিটিংয়ে মূল্যায়ন কমিটির সদস্য গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দেলওয়ার মাহাফুজ সোহাগ ও কমিটির আহ্বায়ক জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু আল হাজ্জাজ রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজি লিমিটেড এর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে মেসার্স ফাস্ট নর্থ বেঙ্গল সিকিউরিটি অ্যান্ড রিক্রুটিং সার্ভিসকে কাজ দেওয়ার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মূল্যায়ন কমিটির এক সদস্য জানান, রেডিশনের বিরুদ্ধে ট্রেজারি চালানের কপি না থাকা, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না থাকা ও সিডিউল ঠিকঠাকমতো পূরণ না করার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রেডিশন ডিজিটাল টেকনোলজির লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করলে অবশ্যই আমার প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে। আমাকে কাজ না দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ট্রেজারি চালানের মূল কপি জমাদান সাপেক্ষে ও নিজস্ব প্যাডে আবেদন করে দরপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ বলা হচ্ছে, ট্রেজারি চালান পাওয়া যায়নি, তাহলে আমি সিডিউল পেলাম কীভাবে? এছাড়া বলা হচ্ছে, আমার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন নেই। অথচ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে ২১-২২ অর্থবছরে। যা আমার নবায়ন আছে। দরপত্রের শর্তাবলীতে কোথাও বলা হয়নি, ২২-২৩ সালের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন দিতে হবে। এদিকে কল কারখানা অধিদপ্তরের লাইসেন্স ২২-২৩ সালের আমাদের নবায়ন করা থাকলেও, মেসার্স ফাস্ট নর্থ বেঙ্গল সিকিউরিটি অ্যান্ড রিক্রুটিং সার্ভিসের ২২-২৩ সালের কল কারখানা অধিদপ্তরের নবায়নকৃত লাইসেন্স নেই। কিন্তু এ ব্যাপারে মূল্যায়ন কমিটির কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমি ধারণা করছি তারা ফাষ্ট নর্থ বেঙ্গল কোম্পানিকে যে করেই হোক কাজটা পাইয়ে দিতে চায়।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া আমাদের কোম্পানির বিরুদ্ধে তাদের আরেকটি অভিযোগ, সিডিউল সম্পূর্ণ পূরণ করা হয়নি। সিডিউলে অর্থের অংক উল্লেখ করা হয়নি। অথচ আউটসোর্সিং নীতিমালা অনুযায়ী, সিডিউলের ভেতরে নয় বরং সিডিউলের সঙ্গে ফিন্যান্সিয়াল পেপার সংযুক্ত করতে হবে, যা আমি করেছি। এক্ষেত্রে যদি কেউ ফিন্যান্সিয়াল পেপার যুক্ত না করে, শুধু সিডিউল পূরণ করে থাকে, তবে নিয়ম অনুযায়ী সেটি বাতিল হওয়ার কথা। যা ফাষ্ট নর্থ বেঙ্গল কোম্পানি করেছে। অথচ তাদের বাতিল না করে, আমাদের ওপরেই ভিত্তিহীন অভিযোগ করে আমাদের কোম্পানিকে বাতিল করার চেষ্টায় রয়েছে হাসপাতালের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। এখানে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।
অপরদিকে ফিহা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী আবু সাঈদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেসার্স ফাস্ট নর্থ বেঙ্গল সিকিউরিটিকে গত বছরও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে কাজ দিয়েছিলেন সেই সময়কার সিভিল সার্জন রঞ্জিত কুমার রায়। বিষয়টি নিয়ে আমি আদালতে মামলা করেছিলাম। মামলার কারণে সিভিল সার্জনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। পরে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় স্ট্যান্ড রিলিজ স্থগিত করা হয়। এবারও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু আল হাজ্জাজ একই কায়দায় ওই কোম্পানিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, তিনজন দরপত্র দাখিল করলেও আমার জানা মতে, তারা নর্থ বেঙ্গল কোম্পানির কোনো কাগজপত্র যাচাই বাছাই না করে শুধু আমাদের দুটি কোম্পানির কাগজপত্রের ব্যাপারে অন্যায় আপত্তি জানাচ্ছেন বার বার। অথচ আমাদের কোনো কাগজপত্রের ঘাটতি নেই। এজন্য আমরা মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ককে দরপত্র দাখিলকৃত তিনটি কোম্পানির প্রতিনিধির উপস্থিতিতেই সব কোম্পানির কাগজপত্র বাছাইয়ের আবেদন করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। কারণ, তিনি নর্থ বেঙ্গল কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর। যদি অন্যায়ভাবে এবারও ওই কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়, তাহলে আমি আদালতের আশ্রয় নেব। আমরা চাই, এই দরপত্র যেন রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন না করা হয় ।
ফাস্ট নর্থ বেঙ্গল সিকিউরিটি অ্যান্ড রিক্রুটিং সার্ভিস স্বত্ত্বাধিকারী ওয়াদুদ রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কাগজপত্র ঠিক আছে কি না সেটা যাচাই-বাচাই করবে কমিটি, সঠিক না থাকলে বাতিল করে দেবে। আর আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাহলে আমি কি ব্যবসা করতে পারব না? আমি ভাত খাব না? আমি একটা ভালো গেঞ্জি পড়ব না? আমার বাপের কি নাই? আমি টেন্ডার ফেলছি, আমার যোগ্যতা থাকলে আমাকে দেবে, না থাকলে দেবে না। আমি কাউকে অনুরোধ করি নাই।
তিনি আরও বলেন, আমার নীলফামারী টিটিসিতে লোক আছে। নীলফামারী মেডিকেল কলেজে লোক আছে। নীলফামারী পুলিশ সুপারে লোক আছে। সৈয়দপুর হাসপাতালে লোক আছে। ৫ থেকে ৭ বছর ধরে আমরা এটা করতেছি ভাই। এখন যদি কেউ বলে কাগজ নাই তাহলে বাদ দেবে। এমন না যে এটা করেই আমাকে খাইতে হবে। জয় বাংলা।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু আল হাজ্জাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দরপত্র দাখিলকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। যা কিছু করা হয়েছে কমিটির সবার সিদ্ধান্তে হয়েছে। এটা আমার একক সিদ্ধান্তে হয়নি।
শরিফুল ইসলাম/এমএএস