কালী নদীর তুলনায় সেতু ছোট হওয়ায় ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের কালী নদীর উপর নির্মিত সেতুটি চরম জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে জনগণের স্বার্থে সেতু নির্মাণ করা হলেও নেই সংযোগ সড়ক। অন্যদিকে নদীর তুলনায় সেতু ছোট হওয়ায় বর্ষায় পানির চাপে সংযোগ সড়ক ভেসে যায়। বাঁশের সাঁকো দিয়ে সেতুতে উঠতে হয়। ৮ বছর ধরে চলছে এই দুর্ভোগ।

জোয়ারদারপাড়া, শালঘর মধুয়া, কাচারীপাড়া, দুধকুমড়া, খালপাড়া বাজারসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে সেতুতে উঠে চলাচল করছেন।

প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ২৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৩২ টাকা ব্যয়ে ৩৬ ফুটের এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুর দুইপাশের সংযোগ সড়ক ছাড়াই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণের কয়েকমাস পরে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় চেয়ারম্যান বালু দিয়ে জরাজীর্ণ সংযোগ সড়কের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু নির্মাণের পরের বছরেই বন্যায় সেতুটির সংযোগ সড়ক ভেসে গেলেও ৮ বছরে আর সংস্কার করা হয়নি।

বাঁশের সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় সেতুতে

সারাবছর পায়ে হেঁটে কোনোরকম সেতুটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কৃষিপণ্য পরিবহন, ব্যবসায়ীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে না সেতুটি। আর বর্ষার সময় কোনো কাজেই আসে না সেতুটি। অথচ উপজেলার এই গ্রামগুলাতে প্রচুর ধান, পাট, পেঁয়াজসহ হরেক রকমের শাকসবজি কৃষকরা চাষ করলেও যাতায়াত ব্যবস্থা সাবলীল না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

শালঘর মধুয়া গ্রামের কৃষক জলিল বলেন, রাস্তা না থাকায় আমাদের খুব কষ্ট হয়। ১০ মিনিটের পথ ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ঘুরে যেতে হয়। অনেক সময় মাথায় ফসল নিয়ে পারাপার হওয়ার সময় নদীতে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, সংযোগ সড়ক বাদেই সেতু করে চলে গেছে কর্তৃপক্ষ, জনকল্যাণের সেতুটিই এখন চরম জনদুর্ভোগের কারণ।

স্থানীয় কলেজ ছাত্রী ইতি বলেন, সেতুটি দীর্ঘদিন এভাবে রাস্তাবিহীন পড়ে আছে, কর্তৃপক্ষের কোনো নজরে আসে না। বর্ষা মৌসুমে ৫ কিলোমিটার ঘুরে কলেজে যেতে হয়। স্কুলশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, যতদ্রুত সম্ভব সেতুটির সড়ক নির্মাণ করা হলে জনগণের উপকার হয়।

বাগুলাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, নদীর অনুপাতে ব্রিজটি ছোট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানির চাপে সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। সড়ক না থাকায় এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে সড়ক নির্মাণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, আমি যোগদানের পূর্বে ২০১৩ সালে ২৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সড়কের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়কটি মেরামত করা হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করায় সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় হচ্ছে। সেতুটি জনদুর্ভোগের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। যেকোনো মূল্যে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা দরকার।

রাজু আহমেদ/এমএসআর