ভাসমান বেডে সবজি চাষে সমৃদ্ধ কৃষকরা
ভাসমান বেডে পাতাকপি চাষ করা হয়
পানির ওপরে লম্বালম্বি দুটি বাঁশ ও জাল ফেলে তার ওপর কচুরিপানার স্তূপ দিয়ে তৈরি করা হয় ভাসমান বেড। কিশোরগঞ্জে নরসুন্দা নদীর ওপর এভাবেই ভাসমান বেড তৈরি করে কচুরিপানা পচে শুকিয়ে যাওয়ার পর সামান্য মাটি ছিটিয়ে দিয়ে লাল শাক, পালংশাক, পেঁয়াজ, বেগুন, কপি, মিষ্টিকুমড়া, টমেটোসহ বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ করা হয়।
বারি জাতের এসব সবজি ও মসলা স্থানীয় খাদ্যচাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন এখানকার কৃষকেরা। কৃষকদের এ সাফল্য দেখে অনেকেই কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাও এ পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছেন।
বিজ্ঞাপন
পানির ওপরে লম্বালম্বি দুটি বাঁশ ও জাল ফেলে তার ওপর কচুরিপানার স্তূপ দিয়ে তৈরি করা হয় ভাসমান বেড। কিশোরগঞ্জে নরসুন্দা নদীর ওপর এভাবেই ভাসমান বেড তৈরি করে কচুরিপানা পচে শুকিয়ে যাওয়ার পর সামান্য মাটি ছিটিয়ে দিয়ে করা হয় বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই ভাসমান বেড পদ্ধতিতে অনেক ফসল হয়। যা ফলাতে সার ও ওষুধ লাগে না। আর বাজারে এই ফসলের চাহিদা অনেক। এই ফসল যে সময়ে উৎপাদন হয়, আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস, এই সময়ে বাজারে এই ফসলগুলো পাওয়া যায় না। কারণ, এই সময় অতিবৃষ্টি হয়। তাই মাটিতে পানি জমে যায়। ফসল ফলে কম। যে কারণে বাজারে এ সময় ফসল কম থাকে। তাই এই ফসল বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করা যায়। এ সময় একটি লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, একটি চালকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।
বিজ্ঞাপন
অন্য এক চাষি জানান, আমি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কিশোরগঞ্জ থেকে ট্রেনিং নিয়ে প্রথমে ভাসমান বেডে টমেটো চাষ করেছি। এভাবে বেডে চাষ করতে আমার এক হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রথমে আমি চাষ করে খুব চিন্তিত ছিলাম ফলন হবে কি হবে না। কিন্তু লাগানোর অল্প দিনের মধ্যেই গাছ অনেক বড় হতে শুরু করেছে। মাঠে টমেটো গাছ লাগালে যেভাবে বড় হয়, তার চেয়ে দ্রুতই বেডে গাছ বড় হয়েছে। আমি আশা করছি যে এভাবে চাষে আমি লাভবান হব। এ পদ্ধতিতে আমি আরও চারটি বেড তৈরি করেছি।
কিশোরগঞ্জ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, শুরুর দিকে এই চাষে কৃষকদের আগ্রহ কম থাকলেও বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় তৈরিকৃত ছোট-বড় বেডে বিভিন্ন জাতের সবজি ও মসলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।
প্রকল্প পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বললেন, আগাছা ও কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে বিভিন্ন জাতের সবজি ও মসলা উৎপাদন করা যায়, এ বিষয়ে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন সময় মাঠ দিবসের মাধ্যমে তাদের উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম জানান, সারাদেশে প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জায়গা জলাবদ্ধ থাকে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এসব এলাকায় কৃষকেরা যেন সারা বছর ফসল উৎপাদন করতে পারেন, সেই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দেশে ৭১টি উপজেলায় ইতিমধ্যে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা আবাদ করা হয়েছে। এর বিস্তার আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে দেশ। এতে দেশের খাদ্যচাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন কৃষক, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনএ