বেসরকারি চাকরিজীবী মির্জা ফারুক। আয়ের সঙ্গে মধ্যবিত্ত সংসারের ব্যয়ের সামঞ্জস্যে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিনিয়িত। তিনি সুনামগঞ্জের শহরের জগন্নাথবাড়ি রোডের প্রধান বাজারে আসেন তেল কিনতে। দোকানিকে দাম জিজ্ঞেস করলে জানান ১৯০ টাকা লিটার। পরে তেল না কিনেই রওনা দেন তিনি। একটু পরে আবার ফিরে এসে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে কিনলেন তেল।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারের সব দোকান ঘুরলাম। প্রকৃত দামে কেউ তেল বিক্রি করতে চায় না। পুরো বাজার ঘুরে একটা দোকান থেকে কম দামে ২ লিটার তেল কিনতে পেরেছি। শুধু অর্থনীতির কথা বললে হবে না। সরকারকে এগুলোর (বাজার দরের) প্রতিও নজর দিতে হবে।

আরেক ক্রেতা এনজিও কর্মী জিয়াউল হক বলেন, পুরো বাজার ঘুরে ১৯০ টাকা লিটার কিনছি তেল। এর চেয়ে কমে কেউ দেয় না। তেলের দাম বাড়ানোর কথা শুনলে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ায়। অথচ কমার খবর তাদের কান অবদি আসে না।

শুধু মির্জা ফারুক ও জিয়াউল নন, সুনামগঞ্জ জেলায় এখনো নতুন দামে তেল কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। ঘোষণার চার দিন পরও বাজারে কমেনি তেলের দাম। পুরোনো দামে বিক্রিতেই ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। বাজারে তেলের দাম কিছুটা কমলেও পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোয় চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার তর্কবিতর্ক। শেষতক আগের দামেই কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন দরের মাল না আসা ও পুরোনো দরের তেল থেকে যাওয়ার কারণে এমন হচ্ছে। তবে ভোক্তারা বলছেন, দাম বাড়ার ঘোষণা এলে সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে যায়। অথচ দাম কমার চার দিন পার হলেও দাম কমার ঘোষণা কার্যকর হয়নি।

বিশ্ববাজারে দাম কমার পর দেশেও খোলা ও বোতলজাত উভয় ধরনের সয়াবিন তেলের দাম কমিয়েছে উৎপাদক ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো। এতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ১৮৫ টাকা। গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) থেকে বাজারে সয়াবিন তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।

সরেজমিনে সুনামগঞ্জের বাজার ঘুরে জানা যায়, জগন্নাথবাড়ি ও স্টেশন রোডের প্রায় সব দোকানে এক লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা লিটার। পাঁচ লিটার তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯৪০ টাকা। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানে একই তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরোনো দরের তেল এখনো শেষ হয়নি। তাই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। নতুন তেল আসলে নতুন দামে বিক্রি হবে।

জগন্নাথবাড়ি রোডের মল্লিকা স্টোরের রিপন বলেন, আমরা পুরাতন রেটের টাকা দিয়ে তেল কিনে আনছি। সেই তেল নতুন রেটে কীভাবে বেচব। তারপরও লিটার-প্রতি ১০ টাকা লস দিয়ে বিক্রি করতেছি। 

লিটন ভেরাইটিজ স্টোরের মিল্টন বলেন, আমরা প্রতি দিন তেল কিনি না। একসঙ্গে কয়েক দিনের তেল কিনে রাখি। সেই তেলই এখনো রইছে। নতুন রেটে লস দিয়া বিক্রি করলে সেই ক্ষতিপূরণ দিবে কে?

বাজারে তেলের সামান্য দাম কমলেও আগের রেট বহাল বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লার দোকানে। পৌর শহরের মল্লিকপুরের জেলা পরিষদের সামনের ভাই ভাই স্টোরের প্রোপাইটর জানান, বোতলজাত তেলের লিটার ২০০ টাকা। আর প্যাকেট তেল ১৯০ টাকা। পুষলে কিনবেন, না পুষলে কিনবেন না! 
 
এ বিষয়ে তীর কোম্পানির ডিলার সুজন তালুকদার জানান, সরকারে নির্দেশ দিলেই হবে না। বডিতে যে রেট আছে, সে রেটেই নিতে হবে।

তবে ভিন্ন কথা বললেন ফ্রেশ কোম্পানির শফিক। তিনি বিক্রীত ভাউচার দেখিয়ে বললেন, আমরা ঘোষণার পর থেকেই কম রেটে বিক্রি করছি। বেশি দামে বিক্রি করা এগুলো দোকানদারদের কাজ। ব্যবসায়ীরা লস খাবে নাকি ডিলার লস খাবে, এটি আমাদের বিষয়। ক্রেতারা যেন সঠিক দামে পায়। 

তবে দোকান ব্যবসায়ীদের সুরে তাল মেলালেন সুনামগঞ্জ ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, আমরা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছি দ্রুত নতুন রেটের তেল দেওয়ার জন্য। নতুন রেটের তেল না পেলে তো তারা আগের রেটেই বিক্রি করবে। নতুন রেটের তেল এলে আমরা তদারকি করব যে নতুন রেট মানা হচ্ছে কি না।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অসীম চন্দ্র বণিক বলেন, আমরা এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখব। তারপর ব্যবস্থা নেব।

এনএ