মরুভূমির গোলাপ বলা হয় অ্যাডেনিয়াম ফুলকে। অ্যাডেনিয়ামের আদি মাতৃভূমি দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার মরুভূমি। মরুর এই অ্যাডেনিয়াম গাছকে পরম যত্নে বনসাই করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিক্ষার্থী আব্দুস সবুর সুজন। তার এই শখের অ্যাডেনিয়াম বনসাইয়ের দাম এক লাখ টাকা। অ্যাডেনিয়াম বনসাই ছাড়াও আব্দুস সবুর সুজনের কাছে রয়েছে ১৭ বছর বয়সী পাকুড়ের বনসাই। যার দাম ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনুষ্ঠিত ৭ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলায় এসব বনসাই গাছের স্টল দিয়েছেন আব্দুস সবুর সুজন। মেলায় ২৫টি স্টলে রয়েছে বিভিন্ন ফুল, ফল ও ঔষধিসহ বট প্রজাতির গাছ। গত সোমবার (২৫ জুলাই) কালেক্টরেট চত্বরে এ মেলার উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল। মেলাটি চলবে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত। মেলার ১৩ নং স্টলে শোভা পাচ্ছে আব্দুস সবুর সুজনের বনসাই গাছগুলো। 

মেলায় ঘুরতে আশা দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে আব্দুস সবুর সুজনের এক লাখ টাকা মূল্যের বনসাই গাছটি। অনেকের আগ্রহে পরিণত হয়েছে গাছটি। গাছের গায়ে থাকা মূল্য দেখে চমকে উঠছেন দর্শনার্থীরা। ছবি তুলছেন ফুল ও বনসাই গাছের। সুজন এবারই প্রথমবারের মতো বৃক্ষমেলায় অংশ নিয়েছেন। শখের বসে সুজন গড়ে তুলেছেন নানারকম দুর্লভ প্রজাতির গাছের বনসাই। এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র সুজন বৃক্ষমেলায় ৩০টি বট প্রজাতির বনসাইসহ ফুলের গাছ এনেছেন। তার মধ্যে অ্যাডেনিয়াম ১৫টি আর বাকিগুলো অন্যান্য ফুলের গাছ। 

ঢাকা পোস্টকে আব্দুস সবুর সুজন বলেন, অ্যাডেনিয়াম ফুল গাছ সাধারণত মরুভূমিতে হয়ে থাকে। এ ফুলের সৌন্দর্য যে কাউকে নিশ্চিত বিমোহিত করবে। অনেক গাছেরই বনসাই করা যায়। তবে অ্যাডেনিয়াম করলে তার সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই শখের বসে ১১ বছর আগে একটি অ্যাডেনিয়াম গাছকে বনসাই করতে কাজ শুরু করি। এই গাছটি আকর্ষণীয় ও চমৎকার করতে অনেক যত্ন ও পরিশ্রম করতে হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১১ বছরের অ্যাডেনিয়াম বনসাই গাছ সারাদেশে হয়ত হাতেগোনা কিছু পাওয়া যাবে। দীর্ঘ বয়স ও সৌন্দর্যের কারণে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ টাকা। গত ৬ দিন মেলাতে এই গাছ নিয়ে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যেকোনো দর্শনার্থী গাছটি দেখে আগে কয়েকটা ছবি তুলছে। মনে হচ্ছে, আমার স্টলে থাকা অন্য গাছগুলোর আর্কষণ সব কেড়ে নিয়েছে এই অ্যাডেনিয়াম ফুলগাছ। 

বৃক্ষমেলা ঘুরতে এসেছে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জুয়েল, সামিহা ও সোহানা। তারা বলেন, গাছটি অসাধারণ। এত দিন আগের অ্যাডেনিয়াম বনসাই গাছ এর আগে কখনও দেখিনি। আরও আকর্ষণ করছে গাছে থাকা লাল ফুল। তাই অনেকগুলো ছবি নিলাম। 

বাড়ির বেলকুনিতে টবে বনসাই লাগানোর শখ মাসকুরা মিমের। অন্তত ১১টি বনসাই গাছ রয়েছে তার। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ফেসবুকে ছবি দেখে শুধুমাত্র এই স্টলে বনসাই গাছ দেখতে মেলায় এসেছি। দেখেই মন ভরে গেল। এর সৌন্দর্য ও বয়স বিবেচনায় দাম নির্ধারণ অস্বাভাবিক নয়। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, শক্ত কাণ্ড বিশিষ্ট গাছকে নান্দনিকভাবে খর্বাকৃতি করার যে শিল্প তাকেই বনসাই বলে। টোকিওর রাজশিক প্রাসাদে থাকা অনেক পুরোনো জীবিত একটি বনসাইকে জাপানের জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি মূলত শখের ফুলগাছ। সৌন্দর্যবর্ধনই এর একমাত্র লক্ষ্য। অ্যাডেনিয়াম ফুলগাছ যেহেতু অনেক দামী, তাই শখ করে লাখ টাকা ব্যয় করেও কেউ কিনতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আপনার লাগানো একটি অ্যাডেনিয়াম বনসাই গাছ স্মৃতি হয়ে থাকতে পারে দু-এক প্রজন্মের কাছে। অ্যাডেনিয়ামের আদি মাতৃভূমি দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার মরুভূমি, সুদান, কেনিয়া, সেনেগালের পশ্চিমাঞ্চল, ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়া উদ্ভিদটি প্রাকৃতিকভাবেই শ্রীলঙ্কাতেও আছে। বর্তমানে ফুলের কদর ও সৌন্দর্যের কারণে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হচ্ছে থাইল্যান্ডে। এছাড়াও ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইন, জাপান থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও কানাডাতেও এর চাষ হচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলম/এসপি